Category Archives: ব্যকরণ

বহু নির্বাচনী প্রশ্ন

১। পৃথিবীর প্রায় কত কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে?
ক. দশ কোটি খ. পঁয়ত্রিশ কোটি
গ. পঁচিশ কোটি ঘ. আড়াই কোটি

২। ভাষার কোন রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়?
ক. চলিত রীতি খ. সাধু রীতি
গ. আঞ্চলিক রীতি ঘ. সব কয়টি

৩। ‘পুরুষ’, ‘বচন’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?
ক. রূপতত্ত্বে খ. বাক্যতত্ত্বে
গ. ধ্বনিতত্ত্বে ঘ. বর্ণমালায়

৪। ধ্বনির মূল উৎস কী?
ক. বাতাস খ. মুখবিবর
গ. গলনালি ঘ. ফুসফুস
৫। নিচের কোনটি যৌগিক স্বরধ্বনি?
ক. ঔ খ. এ গ. ই ঘ. ও
৬। ‘যাবজ্জীবন’ শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?
ক. যাবদ+জীবন খ. যাবজ+জীবন
গ. যাবৎ+জীবন ঘ. যাবয+জীবন
৭। বৃহস্পতি শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?
ক. বৃহঃ+পতি খ. বৃহৎ+পতি
গ. বৃহস+পতি ঘ. বৃহ+স্পতি
৮। প্রকৃতির শেষে যুক্ত হয়ে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কী বলে?
ক. বিভক্তি খ. প্রত্যয়
গ. অনুসর্গ ঘ. উপসর্গ
৯। নিচের কোন শব্দটি ‘ইংরেজি’ ও ‘তৎসম’ শব্দযোগে গঠিত মিশ্র শব্দ?
ক. খ্রিস্টাব্দ খ. ডাক্তারখানা
গ. হাটবাজার ঘ. রাজা-বাদশাহ
১০। নিচের কোনটি যোগরূঢ় শব্দ?
ক. সন্দেশ খ. মধুর
গ. জলধি ঘ. পড়ুয়া
১১। নিচের কোনটি সাকুল্যবাচক সর্বনাম?
ক. যে সে খ. উভয়
গ. উনি ঘ. স্বয়ং
১২। কোনটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ?
ক. ঠাকুরঝি খ. ললনা
গ. শ্যালিকা ঘ. ভাগনি
১৩। কোন ব্যাকরণে প্রতিটি কারকের জন্য শব্দবিভক্তির নির্দিষ্ট রূপ আছে?
ক. বাংলা খ. সংস্কৃত
গ. ইংরেজি ঘ. ফারসি
১৪। নিচের কোনটি ফরাসি শব্দ নয়?
ক. ডিপো খ. রেস্তোরাঁ
গ. কৃপণ ঘ. তারিখ
১৫। ‘ভূগোল’ শব্দটির বিশেষণ পদ কোনটি?
ক. ভৌগোলিক খ. ভূগোলিক
গ. ভূগোলক ঘ. ভৌগুলিক
১৬। বহুবচন প্রকাশে কোন সমষ্টিবাচক শব্দটি ব্যবহৃত হয়?
ক. মালা খ. খানি গ. খানা ঘ. টি
১৭। সরিষা দিয়ে তৈল হয়। নিম্নরেখ পদটি কোন কারকে কোন বিভক্তি?
ক. করণ কারকে তৃতীয়া
খ. কর্মে দ্বিতীয়া
গ. অপাদান কারকে তৃতীয়া
ঘ. অধিকরণে তৃতীয়া
১৮। নিচের কোনটি অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ?
ক. ঘিয়ে ভাজা খ. হাতে কলমে
গ. ধন দৌলত ঘ. দিন রাত
১৯। পূর্বপদ বিশেষ্য ও এবং পরপদ ক্রিয়াবাচক হলে কোন বহুব্রীহি সমাস হয়?
ক. সমানাধিকরণ খ. ব্যধিকরণ
গ. অন্ত্যপদলোপী ঘ. ব্যতিহার
২০। আবেগ প্রকাশক অব্যয় পদ সাধারণত বাক্যের কোথায় বসে?
ক. শুরুতে খ. শেষে
গ. মাঝখানে ঘ. কোথাও না
২১। নিচের কোনটি জটিল বাক্য?
ক. আমার হারানো বইটি ফিরে পেয়েছি
খ. যেহেতু সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি
গ. নদীর জল চল্ চল্ চলছে তার বিরাম নেই
ঘ. মিথ্যাবাদী বালককে কেউ ভালোবাসে না
২২। দুটি বাক্যের মধ্যে অর্থের সম্বন্ধ থাকলে কোন চিহ্ন বসবে?
ক. কমা খ. সেমিকোলন
গ. দাঁড়ি ঘ. প্রশ্নচিহ্ন
২৩। কৃত-প্রত্যয়ান্ত শব্দের আগে উপসর্গ ছাড়া অন্য পদ থাকলে তাকে কোন পদ বলে?
ক. প্রত্যয়ান্ত পদ খ. উপপদ
গ. সমাসবদ্ধ পদ ঘ. সমস্ত পদ
২৪। কোনটির আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে লিঙ্গান্তর করতে হয়?
ক. দেবর খ. নেতা
গ. সাধক ঘ. শিল্পী
২৫। ক্ষুদ্রার্থে স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?
ক. ননদ খ. দিদি
গ. নাটিকা ঘ. নাতনি
২৬। সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা? নিম্নরেখ শব্দটি কোন কারকে কোন বিভক্তি?
ক. করণে সপ্তমী খ. কর্তায় সপ্তমী
গ. কর্মে সপ্তমী ঘ. অধিকরণে সপ্তমী
২৭। কোনটি ভাববাচক বিশেষ্য?
ক. বীরত্ব খ. বৌদ্ধ
গ. গমন ঘ. সমিতি
২৮। শব্দের আগে বসে কোনটি?
ক. অনুসর্গ খ. উপসর্গ
গ. প্রত্যয় ঘ. বিভক্তি
২৯। নিচের কোনটি বিদেশি ধাতু?
ক. চল্ খ. শুন্ গ. গতি ঘ. ডর্
৩০। কোন বাক্যটি নিত্যবৃত্ত অতীত?
ক. তুমি করলে খ. তুমি করতে
গ. তুমি করেছিলে ঘ. তুমি করছিলে
৩১। ‘দীর্ঘজীবী ব্যক্তি’ কথাটি নিচের কোন বাগধারাটি দিয়ে প্রকাশ করা হয়?
ক. কুঁড়ের বাদশাহ খ. কংস মামা
গ. কাক ভূষণ্ডী ঘ. কেতাদুরস্ত
৩২। ‘ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া’_প্রবাদ প্রবচনটির অর্থ কী?
ক. কষ্ট করলে বিনাশ নাই
খ. ব্যথার উপরে ব্যথা দেওয়া
গ. অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হওয়া
ঘ. না বুঝে কাজ করা
৩৩। ‘সহজে যা ছাড়ে না’_কথাটি কোন বাগধারাটি দিয়ে প্রকাশ করা হয়?
ক. কুপোকাত খ. কচ্ছপের কামড়
গ. কম্বলের লোম বাছা
ঘ. কাঁঠালের আমসত্ত্ব
৩৪। কথায় বর্ণনা করা যায় না_এক কথায় কী বলে?
ক. অকথ্য খ. অবর্ণনীয়
গ. অনির্বচনীয় ঘ. কিংকর্তব্যবিমূঢ়
৩৫। কোনটি ‘কুসুম’ শব্দের প্রতিশব্দ?
ক. প্রসূন খ. গন্ধ বহ
গ. প্রমদা ঘ. মহী
৩৬। ‘বাত্যা’ শব্দটি কোন শব্দের প্রতিশব্দ?
ক. উদক খ. তুফান
গ. মুকুট ঘ. কষ্ট
৩৭। ‘প্রাচ্য’ শব্দটির বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?
ক. অপ্রাচ্য খ. প্রতীচ্য
গ. অপ্রতিচ্য ঘ. প্রতিচ্য
৩৮। Anthology-এর পরিভাষা কোনটি?
ক. শিল্প প্রদর্শনী খ. সাহিত্য-সংকলন
গ. দায়বদ্ধতা ঘ. সপক্ষতা
৩৯। ‘জনরব শুনে যে হাজির হয়’_তাকে এক কথায় কী বলা হয়?
ক. জনশ্রুতি খ. রবাহূত
গ. রবাহাজির ঘ. রবাহাত
৪০। ‘যামিনী’-এর প্রতিশব্দ কোনটি?
ক. শর্বরী খ. সংগ্রাম
গ. নিকর ঘ. কলেবর
৪১। অনুবাদকে মূলত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
ক. তিন ভাগে খ. দুই ভাগে
গ. চার ভাগে ঘ. পাঁচ ভাগে
৪২। কোন জাতীয় অনুবাদে স্বাধীনতা খর্ব হয়?
ক. ভাবানুবাদে খ. আক্ষরিক অনুবাদে
গ. ইংরেজি অনুবাদে ঘ. বাংলা অনুবাদে
৪৩। অনুবাদের ভাষায় কী থাকা উচিত নয়?
ক. প্রাঞ্জলতা খ. সরলতা
গ. জটিলতা ঘ. স্পষ্টতা
৪৪। It is a long story-এর অনুবাদ কোনটি?
ক. এটি একটি লম্বা গল্প
খ. সে অনেক কথা
গ. এটি হয় একটি লম্বা গল্প
ঘ. এটি হয় একটি দীর্ঘ কথা
৪৫। Practice makes a man perfect-এর সঠিক অনুবাদ কোনটি?
ক. অভ্যাস একজন মানুষকে পরিপূরক করে
খ. অভ্যাস মানুষের দাস
গ. গাইতে গাইতে গায়েন
ঘ. অভ্যাস একজন মানুষকে সঠিক করে
৪৬। পত্রের কোনটিকে মূল অংশ বলা হয়?
ক. সম্বোধন খ. পত্র গর্ভ
গ. নাম-ঠিকানা ঘ. শিরোনাম
৪৭। সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য হারানো বিজ্ঞপ্তি কোন ধরনের পত্র?
ক. অভিযোগ পত্র খ. বিজ্ঞাপন পত্র
গ. আবেদন পত্র ঘ. চুক্তিপত্র
৪৮। কোন পত্র আসলে পত্র নয়?
ক. ব্যক্তিগত পত্র খ. আবেদন পত্র
গ. মানপত্র ঘ. চুক্তিপত্র
৪৯। কোন শ্রেণীর পত্রে জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ করতে হয়?
ক. ব্যক্তিগত পত্রে খ. সংবর্ধনা পত্রে
গ. চাকরির আবেদন পত্রে
ঘ. সংবাদপত্রের চিঠিতে
৫০। আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে যে দাওয়াত পত্র তাকে কী বলে?
ক. নিমন্ত্রণ পত্র খ. আমন্ত্রণ পত্র
গ. অভিন্দন পত্র ঘ. মানপত্র
উত্তর: ১. গ ২. খ ৩. ক ৪. ঘ ৫. ক ৬. গ ৭. খ ৮. খ ৯. ক ১০. গ ১১. খ ১২. খ ১৩. খ ১৪. ঘ ১৫. ক ১৬. ক ১৭. গ ১৮. খ ১৯. খ ২০. ক ২১. খ ২২. খ ২৩. খ ২৪. ঘ ২৫. গ ২৬. ঘ ২৭. গ ২৮. খ ২৯. ঘ ৩০. খ ৩১. গ ৩২. গ ৩৩. খ ৩৪. গ ৩৫. ক ৩৬. খ ৩৭. খ ৩৮. খ ৩৯. খ ৪০. ক ৪১. খ ৪২. খ ৪৩. গ ৪৪. খ ৪৫. গ ৪৬. খ ৪৭. খ ৪৮. গ ৪৯. গ ৫০. ক।

বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ১৭টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

১। যে ক্রিয়া পদের কর্ম থাকে তাকে বলে

ক) অকর্মক ক্রিয়া খ) সকর্মক ক্রিয়া 

গ) প্রযোজক ক্রিয়া ঘ) অসমাপিকা ক্রিয়া

২। অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে বলেÑ

ক) বর্ণ খ) পদ গ) শব্দ ঘ) প্রত্যয়

৩। শব্দের ুদ্রতম একক কোনটি?

ক) বর্ণ    খ) স্বরবর্ণ গ) ব্যঞ্জনবর্ণ  ঘ) ধ্বনি 

৪। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে বলেÑ

ক) বর্ণ খ) ধ্বনি গ) বাক্য ঘ) পদ

৫। শব্দকে পদ হতে হলে তার সাথে কী যুক্ত থাকতে হয়?

ক) প্রত্যয় খ) বিভক্তি  গ) অনুসর্গ ঘ) উপসর্গ

৬। পদের গঠনে কয়টি অর্থযুক্ত অংশ থাকে?

ক) একটি খ) দু’টি গ) তিনটি ঘ) চারটি

৭। প্রকৃতি কয় প্রকার?

ক) ২ প্রকার খ) ৩ প্রকার গ) ৪ প্রকার ঘ) ৫ প্রকার

৮। ক্রিয়া প্রকৃতির অন্য নাম কী?

ক) উপসর্গ খ) অনুসর্গ গ) প্রত্যয় ঘ) ধাতু

৯। বিভক্তি কয় প্রকার?

ক) দুই খ) তিন গ) চার ঘ) পাঁচ

১০। নাম প্রকৃতির সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলেÑ

ক) ধাতু খ) প্রত্যয় গ) শব্দ বিভক্তি ঘ) ক্রিয়া বিভক্তি

১১। প্রত্যয় কত প্রকার?

ক) ২ প্রকার খ) ৩ প্রকার 

গ) ৪ প্রকার ঘ) ৫ প্রকার

১২। কৃৎপ্রত্যয় কিসের শেষে যুক্ত হয়?

i. ক্রিয়া প্রকৃতি i i. ধাতু i i i. উপসর্গ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক) iও i i খ) i ও i i i গ) i i ও i i i ঘ) i, i i ও i i i

১৩। তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দ কোনটি?

ক) পড়া খ) খাওয়া গ) মোগলাই ঘ) চলা

১৪। ‘বার্ষিক’ শব্দটির সঠিক প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?

ক) বার+সিক (খ) বর্ষ+ইক 

(গ) ব+রষিক (ঘ) বরষ+ইক

১৫। প্রত্যয় সাধিত শব্দ কোনটি?

ক) সুশ্রী খ) সফল  গ) জেলে ঘ) মহাত্মা

১৬। সাধারণত পদ কয় প্রকার?

ক) তিন খ) চার  গ) পাঁচ ঘ) ছয়

১৭। নামপদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

ক) ২ খ) ৩ গ) ৪ ঘ) ৫

উত্তর : ১. খ, ২. গ, ৩. ঘ, ৪. ঘ, ৫. খ, ৬. খ, ৭. ক, ৮. ঘ, ৯. ক, ১০. গ, ১১. ক, ১২. ক, ১৩. গ, ১৪. খ, ১৫. গ, ১৬. ঘ, ১৭. গ।

প্রমিত বাংলা ব্যকরণ আর ভাষিক আগ্রাসন বিষয়ে কয়েক প্যারাগ্রাফ

উচ্চারণকে চিহ্নে ধারণ করতে চাওয়া কিংবা শব্দের ভেতরে অনেকগুলো আলাদা উচ্চারণকে শনাক্ত করে সেসব আলাদা আলাদা উচ্চারণকে চিহ্নে ধারণ করা ভাষাবিকৃতি কিংবা ভাষার বিচ্যুতি রোধে অনেক বেশী কার্যকর হয়ে উঠেছিলো, ছাপাখানার আবিস্কার সেসব চিহ্নকে এক ধরণের স্থিরতা এনে দিয়েছে। বর্তমানের কম্পিউটার যুগে সেসব চিহ্নে নানা ধরণের শৈল্পিকতা এবং বাক্যের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ফর্মায় সেসব সংবদ্ধ উচ্চারণচিহ্নকে সাজানোর সুবিধাটুকু এসেছে। কিন্তু যখন কোনো উচ্চারণের কোনো চিহ্নই ছিলো না তখন ভাষা কিভাবে প্রবাহিত হয়েছে ভবিষ্যতে?

ভাষিক আগ্রাসন পৃথিবীর ইতিহাসে সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়, বিভিন্ন প্রাযুক্তিক আবিস্কার ভাষা আগ্রাসনকে এক ধরণের স্থবিরতা এনে দিয়েছে এটুকু বলাই যায়। ভাষাকে চিহ্নিত করার আগেই মানুষ ভাষিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে, সামরিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দক্ষতায় ভাষাকে দখল করেছে বলশালী গোত্র, ঠিকমতো ভাষাকে বুঝে উঠবার আগেই ভাষা বেদখল হয়ে যাওয়ার ইতিহাসও দেখেছে পৃথিবী।

দিগ্বিজয়ী যোদ্ধাদের ঘোড়ার খুরের শব্দের সাথে তাদের মুখের ভাষাও পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে, তারাই নিজেদের মুখের ভাষাকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, একই সাথে ক্ষীণ হলেও পরাজিত মানুষের মুখের ভাষাও বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে। তাদের ম্রিয়মাণ কণ্ঠস্বর, তাদের আত্মগোপন করে থাকবার প্রবনতা কিংবা তাদের গোত্রাহংকার তাদের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সঙ্কুচিত রেখেছিলো। এইসব ক্ষীণকণ্ঠ উদ্বাস্তু রাজ্যহারা মানুষের কাফেলা বিজয়ী সৈন্যদলের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করেছে দুর্গম অঞ্চলে।

বিজয়ীর দর্প কখনও ভাষাকে পবিত্রতা শৃঙ্খল পরায় নি সম্ভবত কিন্তু পরাজিত মানুষেরা নিজেদের ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধতা করেছে ভাষার উপরে পবিত্রতা আরোপ করে। এক ধরণের পবিত্রতা আরোপিত হয়েছে শব্দে, উচ্চারণে, এমন কি যখন উচ্চারণ, শব্দ ধ্বনির চিত্রায়ন চিহ্নায়ন শুরু হলো বিভিন্ন পর্যায়ে এইসব বিষয়েও পবিত্রতা আরোপ করা হয়েছে।

চিহ্ন, শব্দ পবিত্রতা এইসব বিষয় আরও বেশী বৈচিত্র পেয়েছে মানুষের ভাষার ব্যবহার প্রসারিত হওয়ায়। অস্ত্রের জোরে ভাষা দখলের পর ভাষার মৃত্যুর চেয়ে স্বাভাবিক প্রবনতা হলো ভাষার বিবর্তন। দীর্ঘ দিন দীর্ঘ একটি ভৌগলিক পরিসরে বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাসরত মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সুরে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়েছে, সেসব ভাষা ধীরে ধীরে ভিন্ন একটি ভাষায় পরিণত হয়েছে। সব ভাষার ভেতরেই এক ধরণের আঞ্চলিক উচ্চারণ রীতি এভাবেই গড়ে ওঠে। ভাষার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ মুলত ভাষার সন্ধি রক্ষা করে যায়, এরা মধ্যপন্থী মানুষ। এই মধ্যপন্থী মানুষের ভৌগলিক বিস্তৃতি কতটুকু তা নির্ভর করে বসতির দুর্গমতার উপরে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা প্রবল হওয়ায় সেসব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিঅবিকৃত থেকেছে দীর্ঘদিন। এদের অনেকেই সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছে এমন কি ভাষার চিহ্নায়ন হওয়ার আগেই যদি এরা দুর্গম পরিবেশে আত্মগোপন করে থাকে তাহলে ভাষার চিহ্নায়নের প্রয়োজন তারা অনুভব করে নি। তাদের কথ্য ভাষা থাকলেও তারা ভাষার লিখিত রূপ আবিস্কার করতেই পারে নি অদ্যাবধি।

ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেমন ঘটেছে তেমন ভাবেই বিভিন্ন সময়ে ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে মানুষ। স্থানীয় সংস্কৃতির শক্তি সামর্থ্য নির্ধারণ করেছে এই অব্যহত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রক্রিয়ায় কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি কিভাবে প্রভাবিত হবে? বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে এইসব আগ্রাসন প্রতিহত করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে চিন্তাশীল মানুষেরা। যেসব ভাষার লিখিত রূপ বিদ্যমান, বর্তমানের যুগে ভাষিক আগ্রাসনে ভাষা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াটা নেহায়েত বড় মাপের দুর্ঘটনা হিসেবেই পরিচিত হতে পারে।

এই প্রাগৌতিসাহিক চলমান সাংস্কৃতিক-ভাষিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে আমাদের ভাষা আন্দোলন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? আমাদের ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার আগেই ইউরোপে ভাষিক আগ্রাসণ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দার্শণিক লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলো। সে লড়াইয়ে বিজয়ী এবং পরাজিত হওয়ার ইতিহাসও মাধ্যযুগ দেখেছে। তবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক ধরণের অনন্যতা আছে। সাংস্কৃতিক শেকড়, ভাষার পবিত্রতা ইত্যকার হ্যানত্যান যা প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারীর গৎবাধা উচ্চারণ, সেসবের কারণে নয় বরং নেহায়েত অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তারা আন্দোলনমুখর হয়েছিলো।

আমাদের ভাষিক আগ্রাসন প্রতিরোধ আমাদের রুটি-রুজির লোভলালসা উদ্ভুত বিক্ষোভ, যেখানে অংশগ্রহন করেছিলো প্রধানত ছাত্রগণ, যারা ভবিষ্যত কেরানীগিরির ক্ষেত্র হিসেবে কিংবা অন্যতম নিয়োগকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ন মনে করেছিলো। রাষ্ট্রই বাঙালী শিক্ষিত যুবকের অন্যতম নিয়োগকর্তা এটা ঔপনিবেশিক সময় থেকেই প্রতিষ্ঠিত। বাঙালী বালক শিশুশিক্ষার পাতা থেকে একটাই মন্ত্র জপে যদি জুটে যায় একটি সরকারী চাকুরি। এই কেরানীগিরির লড়াইয়ে শিক্ষিত ছাত্রসমাজ পিছিয়ে পরবে যদি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রের এই বিমাতাসূলভ মনোভাব বাঙালী শিক্ষিতের পছন্দ হয় নি। তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। চাকুরি নিয়োগ পরীক্ষার বৈষম্য তৈরি করবে এই নীতি এই বলে আন্দোলনে দাবি দাওয়া তুলেছে, এমন কি ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেল ৩টায় মিছিলে গুলিবর্ষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কেরানীগিরির অধিকার নিয়েই মূলত যাবতীয় মিছিল সমাবেশ। পরবর্তীতে এমন নেহায়েত পেটের আন্দোলনে এক ধরণের বিমূর্ততা নিয়ে এসেছেন সাহিত্যিক সমাজ, তারা একে মহত্ব দিয়েছেন।

আমাদের ভাষার প্রতি মোহটা নেহায়েত অর্থনৈতিক বলেই স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা প্রচলন করতে পারি নি। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ফটাফট ইংরেজী বলতে পারাটা এক ধরণের যোগ্যতা চিহ্নিত হয়েছে। শুদ্ধ বাংলা বলতে লিখতে পারাটা যেহেতু চাকুরি নিয়োগের কোনো শর্ত হয় তাই বাঙালী শিক্ষিত মানুষেরা বাংলা শিখেন নি। তাদের ভেতরে সে বোধও তৈরি হয় নি। কিন্তু ইংরেজী জানাটা এক ধরণের অর্থনৈতিক পরিবরতনের অনুঘটক হয়ে উঠায় মানুষ ইংরেজী শিখেছে আদাজল খেয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে সেটার বিস্ফোরণ ঘটেছে।

যদি বাংলা ভাষা শুদ্ধ করে বলতে ও লিখতে পারার জন্য জনপ্রতি ১০০০ টাকা ধার্য করা হয় তাহলে কোচিং করে, আবৃত্তি কোর্স করে বাঙালী শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা শিখতে ঝাপিয়ে পরবে। আদালতের এত হাঙ্গামা করতে হবে না। ভুল উচ্চারণে বাংলা বললে ১ টাকা হারে জরিমাণা করলেও এই ফল লাভ করা যাবে না। দেখা যাবে যে এই উচ্চারণদারোগা নির্ধারিত হয়েছে সেই ঘুষটুষ নিয়ে বড় দালান হাঁকিয়ে ফেলেছে।

ভাষা ব্যবহারে নানা বৈচিত্র আছে, শব্দ উচ্চারণে আঞ্চলিকতা, ভাষা ব্যবহারের বৈচিত্র এইসব মেনে নিয়েই ব্যকরণবদ্ধ হয় ভাষা। ভাষাকে শৃঙ্খল পরানো নয় ব্যকরণের কাজ ভাষার ভেতরে শৃঙ্খলা উদঘাটন করা, ভাষার সম্ভবনা এবং সীমাবদ্ধতা খতিয়ে দেখবার জন্য একটি ভাষাকে দীর্ঘদিন চর্চিত হতে হয়, সেই ভাষা চর্চার কাজটি করেন সাহিত্যিকেরা। তারা লোকবুলির ভেতর থেকে বিভিন্ন সন্নিবেশনে ভাষার সম্ভবনাগুলো উদঘাটন করেন, এদের ভাষা ব্যবহারকে প্রামাণ্য মেনেই পরবর্তীতে ভাষার ভেতরের শৃঙ্খলা খুঁজে বের করেন ভবিষ্যতে ভাষাবিদগণ।

আমাদের বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো দিক থেকে ঘটা শুরু করেছে, সাহিত্যিক সম্ভবনাধারী প্রাকৃত কিংবা লোকসাহিত্য নিয়ে তেমন যাচাই বাছাই ঘটে নি, রাজদরবারে রাজানুকল্যে গড়ে ওঠা সাহিত্যিক বিষয়াদির রূপ-রস- সাধারণের কণ্ঠে প্রবেশের আগেই এখানে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হয়েছে।

যারা এখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছেন তাদের গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস ছিলো, তাদের অভিজ্ঞতা কিংবা ভাষার ভেতরে শৃঙ্খলা খুঁজবার তাগিদ ছিলো, নেহায়েত ধর্মপ্রচারের দায়ে কিংবা নিজের ধর্ম সম্প্রচারের দায়ে তারা সহজ তরিকায় বাংলা ভাষা/লোকভাষা শিখতে চেয়েছেন।

তারা যাদের গুরু মেনেছেন তাদের সাহিত্যিক সম্ভবনা থাকলেও হয়তো ততটা যোগ্যতা ছিলো না, এমন কি পরমুখে ঝাল খাওয়ার বিষয় এখানে ঘটতে পারে, বাংলা সাহিত্য কিংবা বাংলা ভাষাভাষিদের নিজস্ব প্রয়োজনে বাংলা ব্যকরণ তৈরি হয় নি, বরং ধর্মপ্রচারকদের আগ্রহে এক ধরণের সহজ বাংলা ভাষা পাঠ ব্যকরণ নামে প্রচলিত হয়েছে।

সে কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপনের পর, শাসন এবং শোষণের প্রয়োজন মিটিয়েছে ভাষা, সংস্কৃতের সাথে মৌলিক ব্যবধান থাকলেও সংস্কৃতের শৃঙ্খল বেধেছে এ ভাষাকে, ভাষাও ঔপনিবেশিক প্রয়োজন শোষিৎ হয়েছে, সীমিত জীবনশক্তিতে এরপরো ভাষার বিকাশ ঘটেছে। এক রবিন্দ্রনাথ, এক বঙ্কিমচন্দ্র, এক মধুসুধন, এক বিহারীলাল যেসব সম্ভবনা দেখিয়েছেন, প্রমথ চৌধুরী সংস্কৃত অনুসারী নদীয়া শান্তিপুরী আঞ্চলিক ভাষার সংশোধিত রুপ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে ভাষায় লেখা শুরু করলেন সেটা পরবর্তীতে অনুসরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানেও তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

তারাও চেষ্টা করেছেন বাংলা ব্যকরণ রচনায়, অবশেষে বাংলা একাডেমী সে কাজ সমাপ্ত করেছে, মাত্র তিন বছরের গবেষণায় তারা প্রকাশ করেছেন প্রমিত ভাষার ব্যকরণ, একটি ভাষার ব্যকরণ তৈরি করতে কেউ কেউ অর্ধেক জীবন লাগিয়ে দিলেও বাংলা ব্যকরণ মাত্র তিন বছরে সমাপ্ত করে ফেলা এক ধরণের দক্ষতা কিন্তু আমার অনুমাণ এটাও আদতে সংস্কৃতের আদলে গড়ে ওঠা এক ধরণের ভাষার নিগড়, শিক্ষিত মানুষ ধাতু আর লিঙ্গ নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া ভুলতে পারে নি।

সাধারণ বর্ণাশুদ্ধি

অশুদ্ধ

শুদ্ধ

অশুদ্ধ

শুদ্ধ

অনুদিত

অনূদিত

কৃতীত্ব

কৃতিত্ব

অদ্ভূত

অদ্ভুত

কুটনীতি

কূটনীতি

অন্তোষ্ট

অন্ত্যোষ্টি

কিরিট

কিরীট

অকল্যান

অকল্যাণ

কামর

কামড়

অকৃতৃত্ব

অকৃতিত্ব

কল্যানীয়াষু

কল্যাণীয়াসু

অন্তঃসত্তা

অন্তঃসত্ত্বা

কর্মিষ্ট

কর্মিষ্ঠ

অথিতি

অতিথি

কর্ত্তা

কর্তা

অন্তঃস্তল

অন্তঃস্থল

কনষ্টেবল

কনষ্টেবল

অন্বেষন

অন্বেষণ

কৃতি

কৃতী

অনুসঙ্গ

অনুষঙ্গ

কৌতুহল

কৌতূহল

অপরাহ্ন

অপরাহ্ণ

কাংক্ষা

কাঙ্ক্ষা

অনুচিকিষ্যা

অনুচির্কীষা

কল্যানীয়েসু

কল্যাণীয়েষু

অধ্যাত্ব

আধ্যাত্ম

কতৃপক্ষ

কর্তৃপক্ষ

অকরুন

অকরুণ

কস্তরী

কস্ত্তরী

অকস্মাত

অকস্মাৎ

কালীদাস

কালিদাস

অকৃত্তিম

অকৃত্রিম

ক্রীরা

ক্রীড়া

অগ্রহায়ন

অগ্রহায়ণ

করচা

কড়চা

অতিন্দ্রিয়

অতীন্দ্রিয়

ক্ষিয়মান

ক্ষীয়মান

অক্ষুব্দ

অক্ষুব্দ

খেলোয়ার

খেলোয়াড়

অভিপসা

অভীপ্সা

খসরা

খসড়া

অবতংশ

অবতংস

ক্ষুন্ন

ক্ষুণ্ণ

অঙ্গভুত

অঙ্গীভূত

ক্ষীণজিবী

ক্ষীণজীবী

অকীর্তী

অকীর্তি

খিচুরি

খিচুড়ি

আপোষ

আপস

খরগ

খড়গ

আড়ষ্ঠ

আড়ষ্ট

গড়মিল

গরমিল

আস্তাকুড়ে

আঁস্তাকুড়ে

গুঢ়

গূঢ়

আর্শিবাদ

আশীর্বাদ

গাতাঞ্জলী

গীতাঞ্জলি

আশীষ

আশিস

গ্রামিন

গ্রামীণ

আত্নাহূতি

আত্মাহুতি

জলাঞ্জলী

জলাঞ্জলি

আকাঙ্খা

আকাঙ্ক্ষা

জ্যোস্না

জ্যোৎস্না

আচর

অাঁচড়

জলজলে

জ্বলজ্বলে

আরম্ব

আরম্ভ

জলোচ্ছাস

জলোচ্ছ্বাস

ইর্ষা

ঈর্ষা

নূন্যতম

ন্যূনতম

ইগল

ঈগল

নেস্ত

ন্যস্ত

ইন্দ্রজিত

ইন্দ্রজিৎ

নৈব্যক্তিক

নৈর্ব্যক্তিক

ইপসা

ঈপ্সা

নিলামা

নীলিমা

উর্মি

ঊর্মি

নীরিহ

নিরীহ

উর্ধ্ব

ঊর্ধ্ব

নেপুন্য

নৈপুণ্য

উষা

ঊষা

নিঃছিদ্র

নিশি্ছদ্র

উপুর

উপুড়

নিহারিকা

নীহারিকা

উদিচী

উদীচী

নিস্কলঙ্ক

নিষ্কলঙ্ক

উদ্ভুত

উদ্ভূত

নীরিক্ষণ

নিরীক্ষণ

উন্মীলীত

উন্মীলিত

প্রেরন

প্রেরণ

উপলব্দি

উপলব্ধি

প্রতীচি

প্রতীচী

উষসী

ঊষসী

পোষ্টার

পোস্টার

উর্না

ঊর্ণা

পিপিলিকা

পিপীলিকা

উর্ননাভ

ঊর্ণনাভ

পরিস্ফূট

পরিস্ফুট

উদ্বত

উদ্ধত

পরিত্যাক্ত

পরিত্যাক্ত

উদ্বাবন

উদ্ভাবন

প্রতীকি

প্রতীকী

উদবাস্ত্ত

উদ্বাস্ত্ত

প্রবীন

প্রবীণ

উদ্দীপতী

উদ্দীপতি

পিপড়া

পিঁপড়া

উচ্ছাস

উচ্ছ্বাস

বাচষ্পতি

বাচস্পতি

ঋন

ঋণ

বাদুর

বাদুড়

একিভুত

একীভূত

বারিন্দ্র

বারীন্দ্র

এসিড

অ্যাসিড

বানী

বাণী

এষনা

এষণা

ব্যাক্তিত্ব

ব্যক্তিত্ব

ঐশ্বর্য্য

ঐশ্বর্য

বহিস্কার

বহিষ্কার

ওষ্ঠ

ঔষ্ঠ্য

বর্ষিয়ান

বর্ষীয়ান

ঔদাসিন্য

ঔদাসীন্য

ব্যাঙ্গ

ব্যঙ্গ

উজ্জল্য

ঔজ্জ্বল্য

ব্যাস্ত

ব্যস্ত

বাগিশ

বাগীশ

রূপালি

রুপালি

বুৎপত্তি

ব্যুৎপত্তি

রুপ

রূপ

ব্যাতিক্রম

ব্যতিক্রম

শরিরী

শরীরী

বিরাঙ্গনা

বীরাঙ্গনা

শ্বাসত

শাশ্বত

ব্যতিত

ব্যতীত

বর্স

বর্ষ

বিপনি

বিপণী

শুভাশীষ

শুভাশিস

বিভৎস

বীভৎস

শাপদ

শ্বাপদ

বিদুষী

বিদূষী

শারিরিক

শারীরিক

বিষন্ন

বিষণ্ণ

শুশ্রুষা

শুশ্রূষা

বেহুশ

বেহুঁশ

শ্রবন

শ্রবণ

ব্যাভিচার

ব্যভিচার

শ্রীমতি

শ্রীমতী

ব্রাহ্মন

ব্রাহ্মণ

ষান্নাসিক

ষান্মাসিক

ভবিষৎবানী

ভবিষ্যদ্বাণী

সংসপ্তক

সংশপ্তক

মনুষত্ব

মনুষ্যত্ব

সম্বর্ধনা

সংবর্ধনা

মরিচিকা

মরীচিকা

সত্যাধিকার

স্বত্বাধিকার

মিমাংসা

মীমাংসা

সমিচীন

সমীচীন

মূর্ত্তি

মূর্তি

সরণী

সরণি

মৃণ্ময়

মৃন্ময়

সুচী

সূচি

মূর্ধণ্য

মূর্ধন্য

স্বচ্ছলতা

সচ্ছলতা

মধুসুদন

মধুসূদন

সত্যেও

সত্ত্বেও

মনিষী

মনীষী

সমিরন

সমীরণ

মৃয়মান

ম্রিয়মাণ

স্বরসতী

সরস্বতী

মহুর্ত

মুহূর্ত

শান্তনা

সান্ত্বনা

মুদ্রন

মুদ্রণ

স্মরণীকা

স্মরণিকা

যক্ষা

যক্ষ্মা

স্বাতন্ত্র

স্বাতন্ত্র্য

রবাহুত

রবাহূত

জৈষ্ট্য

জ্যৈষ্ঠ

জগৎবন্ধু

জগদ্বন্ধু

অসহ্যনীয়

অসহনীয়

জোতিস

জ্যোতিষ

অধ্যাবধি

অদ্যবধি

ঝার

ঝাড়

অহর্নিশি

অহর্নিশ

জাপসা

ঝাপসা

অনুমদিত

অনুমোদিত

ঝগরা

ঝগড়া

অস্তমান

অস্তায়মান

ঝাজ

ঝাঁজ

অমৃত্রাক্ষর

অমিত্রাক্ষর

টাকশাল

টাঁকশাল

অজ্ঞানতা

অজ্ঞান

ঠোট

ঠোঁট

অধগতি

অধোগতি

ঢেরস

ঢেঁড়শ

অনুষঙ্গিক

আনুষঙ্গিক

নিচন্ত

নিজন্ত

অভ্যন্তরিক

আভ্যন্তরিক

বাংলা ভাষার রূপ, বাংলা ভাষা ও লিপি

বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত ।

 ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাকে দুই ভাগে¾ কেন্তুম ও শতম ।

বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশের শতম শাখার ভাষা ।

ভাষার প্রাকৃত রূপ থেকে বাংলার সৃষ্টি।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ  বলেছেন-গৌড়ী প্রাকৃতের পরবর্তী স্তর গৌড় অপভ্রংশ থেকে বাংলা  ভাষার উৎপত্তি।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার জন্ম সপ্তম শতকে ।

ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভব দশম শতকে  মাগধী প্রাকৃতের পরবর্তী স্তর মাগধী অপভ্রংশ থেকে থেকে ।

বাংলা লিপি ব্রাহ্মী লিপির কুটিল রূপ থেকে এসেছে ।

সম্রাট অশোক তার অধিকাংশ কর্মব্রাক্ষ্মী লিপিতে লেখান ।

আমাদের উপমহাদেশে আর্য ভাষার যে প্রাচীনতম বর্ণমালার সন্ধান পাওয়া যায় তা খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে অশোকের অনুশাসনের সময়।

ব্রাহ্মী লিপির কয়টি রূপ দেখা যায়ঃ  তিনটি। সারদা (কাশ্মির ও পাঞ্জাবের প্রচলিত রূপ), নাগর (রাজস্থান ও মালব: গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে প্রচলিত রূপ), কুটিল (ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রচলিত রূপ।

বাংলা লিপির সুসংগঠন সেন রাজাদের সময় আমলে হয়।

ইংরেজ আমলে, পঞ্চানন কর্মকার  বাংলা লিপিকে ছাপাখানায় মুদ্রণযোগ্য করে তৈরি করেন ।

বাঙালির জাতি-গঠন শংকর জাতি রূপ ।

ঋক বেদ, মহাভারত, মৎস্যপুরাণ প্রাচীন গ্রন্থে বঙ্গ কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

সম্রাট আকবরের সুবা-বাঙলা সম্পর্কে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়।

আইন-ই-আকবরি গ্রন্থের রচয়িতা আবুল ফজল ।

বাংলার জননীঃ  সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতদের মতে বাংলা সংস্কৃতের দুহিতা (কন্যা)। এ যুক্তি গৃহীত হয়নি। বাংলার জননী প্রাকৃত ভাষা।

বাংলার ভগিনী আসামিয়া ।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়  বলেছেনঃ

ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মনে করেন, মাগধী প্রাকৃত (২০০¾৭০০ খ্রীঃ) হতে মাগধী অপভ্রংশের (৭০০-১১০০ খ্রীঃ) ভিতর দিয়ে প্রাচীন বাংলা উদ্ভূত হয়। কিন্তু ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ মনে করেন, গৌড়ী প্রাকৃত (২০০-৪৫০ খ্রীঃ) হতে গৌড় অপভ্রংশের (৪৫০-৬৫০ খ্রীঃ) ভিতর দিয়ে প্রাচীন বাংলার (৬৫০ খ্রীঃ) উদ্ভব।

প্রাচীন বাংলার প্রধান নিদর্শন পাওয়া যায় বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ (চর্যাপদ) পুস্তকে

সংস্কৃত ভাষা অপরিবর্তিত সাহিত্যিক ভাষা।

বাংলা ভাষা বিকাশের যুগে শৌরসেনা প্রাকৃত প্রাকৃতের প্রভাব বিদ্যমান ছিল।

বাংলা ভাষা গঠনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ভাষার প্রভাব লক্ষণীয়-

অনার্য অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোট-চীনীয় ভাষা গোষ্ঠীর বিশেষ করে অস্ট্রিক ভাষা গোষ্ঠীজাত কোল (মুন্ডা) ভাষার এবং অল্প সংখ্যক বৈদেশিক ভাষার প্রভাব লক্ষণীয়। অনার্য কুল (মুন্ডা) শাখাভুক্ত মুন্ডারী, সাঁওতালী, কুরকী, জুয়াঙ প্রভৃতি ভাষা সমূহের প্রভাব অতি গভীর। প্রাকৃত ভাষা হতে বাংলা যা পেয়েছে তাই বাংলার ভিত্তি। সংস্কৃত হতে বাংলা অসংখ্য শব্দ গ্রহণ করেছে।

ব্রজবুলি  ভাষাকে কৃত্রিম ভাষা বলা হয়

ভাষার বিচ্যুত বা বিকৃত ভাবকে অপভ্রংশ বলে।

বর্তমানে পৃথিবীর ভাষাসমূহের মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ।

দ্বিতীয় পাতা

বাংলা ভাষার প্রসার ক্ষেত্রগুলো হলো-

বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামের কাছাড় ও গোয়ালপাড়া জেলা, বিহার ও ছোটনাগপুরের সাওতাল পরগনা, মানভূম, সিংহভুম ও পূর্ব পূর্ণিয়ায় বাংলা ভাষা প্রচলিত।

দাপ্তরিক ভাষা বা Official language হিসেবে বিশ্বে বাংলার স্থান দশম

উপভাষা বা Dialect-

প্রত্যেক ভাষাতেই মৌখিক একাধিক রূপ আছে। বাংলা ভাষাতেও থানা বা উপজেলা ভেদে মৌখিক ভাষার রূপান্তর ঘটেছে। ভাষার এরূপকে অবশ্য উপভাষা বা Dialect বলে।

লৈখিক ভাষা দুই প্রকার – সাধু ও চলিত।

বাংলার মানুষের মুখের ভাষার  পাঁচটি প্রধান উপভাষা-(রাড়ি, বঙ্গালি, বরেন্দ্রী, কামরূপী ও ঝাড়খন্ডী)।

চলিতভাষা-

বাংলার মানুষের মুখের ভাষার পাঁচটি প্রধান উপভাষা-রূঢ়ি, বঙ্গালি, বরেন্দ্রী, কামরূপী ও ঝাড়খন্ডী। এগুলোর মধ্যে রাঢ়ী কলকাতা ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলের হুগলি, নদীয়া, উত্তর চবিবশ পরগাণার শিক্ষিত ও উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মুখের ভাষা; আর এই ভাষার উপর ভিত্তি করে যে বাংলা ভাষারীতি (Standard colloquial Bengoli= SCB)  গড়ে উঠেছে তাকে বলা হয় চলিত ভাষা বা চলিত গদ্যরীতি।

যাদের হাতে বাংলা সাধু গদ্যের প্রাথমিক রূপটি বিশেষভাবে গড়ে উঠেছিল তাঁদের মধ্যে  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাম-

মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। এর পর রামমোহন রায় সাধু গদ্যের আরো যুক্তিনির্ভর কাঠামো নির্মাণ করেন।

সর্ব প্রথম ‘সাধুভাষা’ কথাটি  ব্যবহার করেন-

রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সাধুভাষা কথাটি তাঁর ‘বেদান্ত গ্রন্থে’ ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠকুর ও বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে সাধুভাষা বিকাশিত হয়ে সৃজনশীল ও মননধর্মী সাহিত্যের মাধ্যমে হয়ে ওঠে।

 যারা প্রথম চলিত গদ্য ব্যবহার করছেন-

বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের পর শরৎচন্দ্র তাঁর উপন্যাসের বর্ণনায় সাধু ভাষা ব্যবহার করলেও পাত্র-পাত্রির সংলাপে তিনি চলিত গদ্য ব্যবহার করেছেন।

যেই  গ্রন্থটিকে মৌখিক গদ্য সাহিত্যের প্রথম প্রবেশাধিকার বলে ধরে নেয়া হয় তা হল-

উহলিয়াম কেরীর, ‘কথোপকথোন’ (১৮০১) গ্রন্থের বিভিন্ন শ্রেণীর সংলাপে ব্যবহৃত গদ্য যদিও আদর্শ চলিত বাংলা ছিল না তবুও এখানেই মৌখিক গদ্য সাহিত্যের প্রথম প্রবেশাধিকার বলে ধরে নেয়া হয়। বিদ্যাসাগর শকুন্তলার সংলাপ অংশে কিছু চলিত গদ্য ব্যবহার করেন।

কলকাতা অঞ্চলের চলিতভাষাকে কিঞ্চিৎ সাধুভাষার মিশ্রণসহ সাহিত্যে প্রথম রূপ দেন –

প্যারীচাঁদ মিত্র তাঁর আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮) উপন্যাসে। বঙ্কিমচন্দ্র, প্যারীচাঁদ মিত্রের কথ্য ভাষাকে স্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন এবঙ এই ভাষাকে ‘অপরভাষা’ বলেছিলেন। এ নামে অভিহিত করেছিলেন। একটি প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকে ‘প্রচলিত ভাষা’ থেকেই পরে ‘চলিতভাষা’ কথাটির প্রচলন হয়।

পুরোপুরি চলিতভাষার ব্যবহার করেন –

কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর হুতোম প্যাঁচার নকশা (১৮৬২) গ্রন্থে।

বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক –

প্রমথ চৌধুরী

চলিত রীতিতে তাঁর প্রথম গদ্য রচনা-

বীরবলের হালখাতা (ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯০২ সালে কিন্তু গ্রন্থাকারে বের হয় ১৯১৬ সালে। এটি একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ।

প্রমথ চৌধুরী  মাসিক সবুজপত্র পত্রিকাটি সম্পাদনা করে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন-

সবুজপত্র (১৯১৪)। এটি একটি সাহিত্য পত্রিকা। ১৯১৪ সালে প্রমথ চৌধুরী ‘সবুজপত্র’ পত্রিকা প্রকাশ করে চলিত গদ্যের পক্ষে ব্যাপক সাহিত্যিক আন্দোলন শুরু করেন। তখন রবীন্দ্রনাথ ও তাতে উৎসাহিত হয়ে পুরোপুরি চলিত গদ্যে লেখা আরম্ভ করেন। চলিত ভাষায় লেখা রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস ‘ঘরে-বাইরে’ (১৯১৬)। উপন্যাসটি ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে। এভাবে সাহিত্যে ক্রমে চলিত গদ্য একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সাধু ভাষায় কোন ভাষায় তৎসম শব্দ বা সংস্কৃত শব্দ বেশি থাকে।

সাধু ও চলিত ভাষার গঠনগত পার্থক্য দেখা দেয়ার ক্ষেত্রসমূহ-

(১)  সর্বনামপদে-তাহার > তার; ইহারা,> এরা

(২) ক্রিয়াপদে- করিতেছি> করছি; যাইবো> যাবো।

(৩) অনুসর্গে- অপেক্ষা > চেয়ে; হইতে > হতে।

(৪) তৎসম শব্দে- সমভিব্যাহারে > সঙ্গে; যৎপরনাস্তি > খুব।

(৫) বিশেষণে- সাতিশয় > অত্যন্ত; ঈদৃশ> এ রকম।

(৬) সমাসবদ্ধতায়-নীলোৎপলদলতুল্য > নীল পদ্মের পাঁপড়ির মতো।

ভাষার মূল উপাদন ধ্বনি।

ণ-ত্ব বিধান

মূর্ধন্য-ণ লেখার নিয়ম:

তৎসম শব্দে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে
দন্ত্য ন-এর মূর্ধন্য ণ হয়ে থাকে। দন্ত্য-ন-এর জায়গায় মূর্ধন্য-ণ হওয়ার এই নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলা হয়। যেমন : পরি + নাম + পরিণাম, পরি + নয় = পরিণয়।

এখানে লক্ষণীয় যে, নাম ও নয় এর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ তে রূপান্তরিত হয়েছে।

বাংলা বানানের নিয়মে ণ-ত্ব বিধান অনুসরণ করা হয়।

ণ-ত্ব বিধানের প্রধান নিয়মগুলো এখানে দেখানো হলো :

১.      ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা, রেফ), ষ-এর পর মূর্ধণ্য ণ হয়। যেমন :

ঋণ            ক্ষরণ              আকীর্ণ           কৃষাণ

ঋণী            উচ্চারণ            জীর্ণ              কর্ষণ

ঘৃণা            দারুণ              পূর্ণিমা            ভূষণ

তৃণ            চারণ              শীর্ণ               বিকর্ষণ

‘ক’ ও ‘ষ’ যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন ক্ষ হয়। এই যুক্তব্যঞ্জনে মূর্ধন্য ষ আছে বলে ক্ষ-এর পরে ন-ধ্বনি থাকলে তা মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন : ক্ষণ, দক্ষিণ, ক্ষুণ্ণ, দূরবীক্ষণ, প্রশিক্ষণ, রক্ষণ।

২.      ট-বর্গ (ট ঠ ড ঢ)-এর পূর্বে যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন :

কণ্টক          অকুণ্ঠিত        মন্ডলি         বণ্টিত

ঘণ্টা            উৎকণ্ঠা          প্রচন্ড          কণ্ঠাস্থি

নিষ্কণ্টক       ভুলুণ্ঠিত         গন্ড            অকালকুষ্মান্ড

৩.      ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা, রেফ), ষ-এর পর যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ (ক খ গ ঘ ঙ), প-বর্গ (প ফ ব ভ ম) এবং য য় হ ং -এই সব অনুকূল বর্ণের এক বা একাধিক বর্ণ থাকে, তবে তার পরে দন্ত্য-ন থাকলে তা মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

কৃপণ          প্রবণ              প্রাঙ্গণ             নিরূপণ

দর্পণ           চর্বণ               সর্বাঙ্গীণ           দ্রবণ

সমর্পণ         শ্রাবণ             গ্রহণ               ক্ষেপণ

নির্মাণ         রোপণ            শ্রাবণ              ব্রাহ্মণ

উপরের নিয়ম অনুযায়ী আয়ন শব্দটি থাকলে আয়ন শব্দের দন্ত্য-ন পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

উত্তরায়ণ                       চন্দ্রায়ণ

পরায়ণ                         রবীন্দ্রায়ণ

সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মে কিছু সাধিত শব্দে এসব বিধান কার্যকর হয় না। ফলে ঐ ধরনের তৎসম শব্দে দন্ত্য-ন বহাল থাকে। যেমন:

অগ্রনায়ক        ছাত্রীনিবাস              নির্নিমেষ

হরিনাম          ত্রিনেত্র                   বহির্গমন

প্রনষ্ট             পরান্ন                    দুর্নীতি

৪.      প্র, পরি, পরা, নির্ -এ চারটি উপসর্গের পর দন্ত্য-ন মূর্ধণ্য-ণ হয়। যেমন:

পরিণত        পরিবহণ         প্রণত             প্রণিপাত

পরিণতি       নির্ণয়             প্রণয়              প্রণীত

প্রবীণ          নির্ণীত           প্রবণ              প্রণিধান

ব্যতিক্রম : পরিনির্বাণ, নির্নিমেষ, প্রঘণ্ট। পরিবহন বানানও শুদ্ধ। অপর, পরা, পূর্ব, প্র-এই কটি পূর্বপদের পর অহ্ন শব্দ ণত্ব বিধান অনুসারে দন্ত্য ন- এর জায়গায় মূর্ধণ্য ণ হয়। যেমন : প্র + অহ্ন + প্রাহ্ণ, অপর + অহ্ন = অপরাহ্ণ, পরা +  অহ্ন = পরাহ্ণ, পূর্ব + অহ্ন = পূর্বাহ্ণ।

৫.      সংস্কৃত ভাষায় দীর্ঘকাল থেকে কিছু শব্দে মূর্ধন্য-ণ চলে আসছে। এ সব তৎসম শব্দে নিত্য মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

       অণু              গণনা              তৃণ               আণবিক

       গণিত           বাণ               কণা              গৌণ

       গণক            জীবাণু            স্থাণু              বেণু

৬.      বাংলা ভাষায় মূল সংস্কৃত (তৎসম) শব্দের মত সংস্কৃত শব্দের পরিবর্তিত রূপেরও ব্যবহার প্রচলিত আছে। এ ধরনের শব্দকে তদ্ভব বা প্রাকৃতজ শব্দ বলা হয়। এ ধরনের শব্দের মূল সংস্কৃত বানানের মূর্ধন্য-ণ এর জায়গায় দন্ত্য ন হবে। যেমন :

তৎসম        তদ্ভব            তৎসম              তদ্ভব

এক্ষণ         এখন            কর্ণ                 কান

কোণ         কোনো          গৃহিণী              গিন্নি

প্রণাম         পেন্নাম          ঘৃণা                 ঘেন্না

৭.      বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয় না। যেমন : ইরান, তুরান, জার্মান, কোরান। বিদেশি শব্দে ট-বর্গের নিয়মও অকার্যকর। যেমন :

অ্যাকসিডেন্ট                         কন্ট্রোল

এজেন্ট                                ক্যান্টিন

পেশেন্ট                               সিমেন্ট

৮.      ত বর্গ (ত থ দ ধ ন)-এর পূর্বে যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: গ্রন্থ, বৃন্দ, বৃন্ত।

৯.      সম্মানসূচক ক্রিয়াপদের শেষে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন : করেন, ধরেন, করুন, ভরুন।

ছদ্মবেশী সমাস

মূলত সমাসবদ্ধ পদ কিন্তু ধ্বনিগত রূপান্তরের ফলে তাদের আর চেনাই যায় না। যেমন, ভাজ <ভ্রাতৃ-জায়া, ভাশুর<ভ্রাতৃশ্বশুর, কুমোর<কুম্ভকার, কামার <কর্মকার, চামার<চর্মকার, আটাসে (আটমেসে), অঘ্রান (<অগ্রহায়ণ), আখড়া < অক্ষবাট, বাসর < বাসগৃহ, পাঁচড়া< পঞ্চবট, গাঙ্গুলি (গঙ্গকুলিক) ইত্যাদি।

এই সব শব্দ মূলত সমাসবদ্ধ, কিন্তু চোখে তা ধরাই যায় না, এই রকম শব্দের সংখ্যা বাংলায় নেহাত কম না। এগুলোকে ছদ্মবেশী সমাস বলে।

বিদেশি নামে এমন সব উদাহরণ মেলে, সেগুলো যে সমাসবদ্ধ পদ বা চট করে ধরা পড়ে না। যেমন Johnson = son of John, বেনজামিন = জামিনের ছেলে, Dickson = son of Dick ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ

ক্ত = ক্+ত                        ক্র = ক্+র

ক্ষ = ক্+ষ                         ঙ্ক = ঙ্+ ক

ঙ্ক = ঙ্+ক                        ঙ্গ = ঙ্+গ

জ্ঞ = জ্+ঞ                        ঞ্চ = ঞ্+চ

ঞ্ছ = ঞ্+ছ                         ঞ্জ = ঞ্+জ

ট্ট = ট্+ট                          ন্ড = ণ্+ড

ত্ত = ত্+ত

ত্র = ত্+র                         ত্রু = ত্+র+উ

ত্থ = ত্+থ                         দ্ধ = দ্+ধ

ন্ধ = ন্+ধ                          ভ্র = ভ্+র

ভ্রু = ভ্+র+উ                     ভ্রূ = ভ্+র+ঊ

রু = র্+উ                          রূ = র্+ঊ

শু = শ্+উ                         শ্রু = শ্+র+উ

শ্রূ = শ্+র+ঊ                     ষ্ম = ষ্+ম

ষ্ণ = ষ্+ণ                         স্ত = স্+ত

স্থ = স্+থ                          হু = হ্+উ

হৃ = হ্+ঋ                          হ্ন = হ্+ন

হ্ণ= হ্+ণ                           হ্ম = হ্+ম

অব্যয়ীভাব সমাস

দিন দিন = প্রতিদিন ; কূলের সমীপে = উপকূল : মিলের অভাব = গরমিল। এই পদগুলিকে ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর’¾ উপসর্গ বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস হয়েছে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধানরুপে বোঝাচ্ছে; পরপদগুলি বিশেষ্য।

যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয়ের  সঙ্গে পরপদ বিশেষ্যের সমাস হয় এবং অব্যয় পদের অর্থই প্রধানরুপে প্রতীয়মান হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।

  এ সমাসের পূর্বপদের অব্যয়টির সাধারণত কোনো অর্থ থাকে না। তবে এ সব অব্যয় শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থ দ্যোতনা করে।

সামীপ্য (নিকট), বীপ্সা (পুন: পুন:), অনতিক্রম, অভাব, পর্যন্ত, যোগ্যতা, সাদৃশ্য, পশ্চাৎ, সাফল্য, অবধি প্রভৃতি নানাপ্রকার অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়।

(১)    সামীপ্য: কুলের সমীপে =উপকূল; নগরীর সমীপে = উপনগরী; কাঠের সমীপে = উপকণ্ঠ; অক্ষির সমীপে = সমক্ষ; দুপুরের কাছাকাছি = দুপুর নাগাদ; সকালের কাছাকাছি = সকালনাগাদ।

(২)   বীপ্সা (পুন: পুন: অর্থে)ঃ দিন দিন = প্রতিদিন; গৃহে গৃহে = প্রতিগৃহে; ক্ষণে ক্ষণে = অনুক্ষণ, প্রতিক্ষণ; মণে মণে = প্রতিমণ, মণপিছু; জনে জনে = জনপ্রতি, জনপিছু; জেলায় জেলায় = প্রতিজেলায়; বছর বছর = ফিবছর; রোজ রোজ= হররোজ; মাঠে মাঠে = মাঠকে-মাঠ, সনে সনে = ফি-সন. গাঁ-এ গাঁ-এ = গাঁকে-গাঁ।

(৩)   অনতিক্রম ঃ বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবিধি ;উচিতকে অতিক্রম না করে = যথোচিত; এইরকম, যথাশক্তি, যথাসাধ্য, যথেচ্ছ, যথারীতি যথাযোগ্য, যথার্থ, সাধ্যমতো, যথাজ্ঞান, আয়মাফিক।

(৪)    অভাবঃ বিঘ্নের অভাব = নির্বিঘ্ন; মানানের অভাব = বে-মানান; বন্দোবস্তের অভাব = বে-বন্দোবস্ত; ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ; ভাতের অভাব = হাভাত; মিলের অভাব = গরমিল; ঝঞ্ঝাটের অভাব = নির্ঝঞ্ঝাট; লুনের (লবনের) অভাব = আলুনি; টকের অভাব মিষ্টির অভাব = না-টক-না-মিষ্টি; ঘরের অভাব = হা-ঘর; হায়ার অভাব = বেহায়া; মক্ষিকার অভাব = নির্মক্ষিক।

(৫)   সীমা ও ব্যাপ্তি (পর্যন্ত)¾ জীবন পর্যন্ত = আজীবন; সমুদ্র পর্যন্ত = আসমুদ্র; বাল, বৃদ্ধ ও বণিতা পর্যন্ত = আবালবৃদ্ধবণিতা; মূল পর্যন্ত = আমূল; মরণ পর্যন্ত = আমরণ; পাদ (পা) থেকে মস্তক পর্যন্ত = আপাদমস্তক; আদি থেকে অস্ত পর্যন্ত = আদ্যন্ত; কণ্ঠ পর্যন্ত = আকণ্ঠ; দিন ব্যাপিয়া = দিনভর; রাত ব্যাপিয়া = রাতভর; গলা পর্যন্ত = গলানাগাল। এইরকম-আশৈশব, আসমুদ্রহিমাচল।

(৬)   যোগ্যতাঃ  রুপের যোগ্য = অনুরুপ; কুলের যোগ্য = অনুকূল; গুণের যোগ্য = অনুগুণ।

(৭)    পশ্চাৎ : গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন; তাপের পশ্চাৎ = অনুতাপ; করণের পশ্চাৎ = অনুকরণ; ইন্দ্রের পশ্চাৎ = উপেন্দ্র; গৃহের পশ্চাৎ = অনুগৃহ।

(৮)   সাদৃশ্য ঃ দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ; কথার সদৃশ= উপকথা; ভাষার সদৃশ = উপভাষা; মুর্তির সদৃশ = প্রতিমুর্তি, বনের সদৃশ = উপবন; কিন্তু (হীন দেবতা = উপদেবতা); মন্ত্রীর সদৃশ = উপমন্ত্রী; রাষ্ট্রপতির সদৃশ = উপরাষ্ট্রপতি; দানের সদৃশ = অনুদান; ধ্বনির সদৃশ = প্রতিধ্বনি; লক্ষের সদৃশ = উপলক্ষ।

(৯)   ক্ষুদ্রতাঃ উপ (ক্ষুদ্র) গ্রহ = উপগ্রহ; ক্ষুদ্র বিভাগ = উপবিভাগ, ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ; ক্ষুদ্র শাখা = প্রশাখা; ক্ষুদ্র সাগর = উপসাগর; ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি; ক্ষুদ্র নদী = উপনদী।

(১০) সাকল্যঃ  বাল বৃদ্ধ ও বণিতা সকলে = আবালবৃদ্ধবণিতা; পামর জনসাধারণ সকলে = আপামর জনসাধারণ।

(১১) বৈপরীত্য : কূলের বিপরীত = প্রতিকূল; দানের বিপরীত = প্রতিদান; শোধের বিপরীত = প্রতিশোধ; পক্ষের বিপরীত = প্রতিপক্ষ।

(১২) সম্মুখ :  অক্ষির সম্মুখে = প্রত্যক্ষ।

(১৩) নিপাতনে সিদ্ধ : অক্ষির অগোচর = পরোক্ষ; আত্নাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম; মুখের অভিমুখে = সম্মুখ; দৈবকে অধিকার করে = অধিদৈব;  দুঃ (দু:খকে) গত = দুর্গত; দক্ষিণকে প্রগত = প্রদক্ষিণ; বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল; বাস্ত্ত থেকে উৎখাত = উদ্বাস্ত্ত; শৃঙ্খলাকে অতিক্রান্ত = উচ্ছৃঙ্খল; হীন দেবতা = অপদেবতা; ঝুড়িকে বাদ না দিয়ে = ঝুড়িসুদ্ধ; দস্ত্তর অনুযায়ী =  দস্ত্তর মতো; প্রত্যাশার আধিক্য = হাপিত্যেশ; কাজ চালাবার মতো = কাজচালাগোছ।

   অব্যয়ীভাব সমাসের অতিরিক্ত উদাহরণ

অনুতাপ = তাপের পশ্চাৎ                অনুগমন = গমনের পশ্চাৎ

আকর্ণ = কর্ণ পর্যন্ত                       আমৃত্যু = মৃত্যু পর্যন্ত

আমরণ = মরণ পর্যন্ত                    আনত = ঈষৎ নত

উপগ্রহ = গ্রহের সদৃশ/ক্ষুদ্র                উপাধ্যক্ষ = অধ্যক্ষের সদৃশ্য

উপকূল = কূলের সমীপে                 প্রতিক্ষণ = ক্ষণে ক্ষণে

প্রতিজন = জনে জনে                     প্রতিবার = বার বার

প্রতিকূল = কূলের বিপরীত              প্রতিবাদ = বাদের বিপরীত

প্রতিকৃতি = কৃতির সদৃশ                প্রতিধ্বনি = ধ্বনির সদৃশ

প্রতিচ্ছবি = ছবির সদৃশ                  যথারীতি = রীতি অতিক্রম না করে

যথাশক্তি = শক্তিকে অতিক্রম না করে দুর্ভিক্ষ = ভিক্ষার অভাব

যথানিয়ম = নিয়মকে অতিক্রম না করে

যথাসময়ে = নির্দিষ্ট সময়ে               অনুসরণ = সরণের পশ্চাৎ

অধ্যাত্ম = আত্মাকে অধিকার করে       আজানু = জানু পর্যন্ত

আপদমস্তক = পা থেকে মাথা পর্যন্ত     আজন্ম = জন্ম পর্যন্ত

আরক্তিম = ঈষৎ রক্তিম                 উপভাষা = ভাষার সদৃশ/ক্ষুদ্র

উপজাতি = জাতির সদৃশ/ ক্ষুদ্র          উপসাগর = সাগরের সদৃশ/ ক্ষুদ্র

উপবৃত্তি = বৃত্তির সদৃশ                   উপপত্নী = পত্নীর সদৃশ

উপবন = বনের সদৃশ/ক্ষুদ্র                উপশহর = শহরের সমীপে

প্রতিদিন = দিন দিন                     প্রতিমন = মন মন

প্রতিমুহূর্ত = মুহূর্ত মুহূর্ত                  প্রতিদান = দানের বিপরীত

প্রত্যুত্তর = উত্তরের বিপরীত             প্রতিচ্ছায়া = ছায়ার সদৃশ

প্রতিমূর্তি = মূর্তির সদৃশ                 প্রতিবিম্ব = বিম্বের সদৃশ

যথাবিধি = বিধি অতিক্রম না করে     যথাসাধ্য = সাধ্যকে অতিক্রম না করে

যথাস্থানে = নির্দিষ্ট স্থানে                 যথার্থে = নির্দিষ্ট অর্থে

অতিদীর্ঘ = দীর্ঘ কে অতিক্রান্ত           অতিপ্রাকৃত = প্রাকৃতকে অতিক্রান্ত

অপবাদ = অপকৃষ্ট বাদ                   অপকীর্তি = অপকৃষ্ট কীর্তি

দুর্গন্ধ = মন্দ গন্ধ                          দুর্দিন = মন্দ দিন

দুর্বাক্য = মন্দ বাক্য                      দুরতিক্রম্য = দুঃখ-কষ্টে অতিক্রম্য

পরিজন =পরিগত/আপন জন            বিতৃষ্ণা = বিগত তৃষ্ণা

বিমিশ্র = বিশেষ ভাবে মিশ্র             হররোজ = রোজ রোজ

ঘোলাটে = ঈষৎ ঘোলা                   ফিকানীল = ঈষৎ নীল

হা-ঘর = ঘরের অভাব                    বেহায়া = হায়ার অভাব

নিরামিষ = আমিষের অভাব             অতিমানব = মানবকে অতিক্রান্ত

অতীন্দ্রিয় = ইন্দ্রিয়কে অতিক্রান্ত         অতিপ্রিয় = অত্যধিক প্রিয়

দুর্জন = মন্দ জন                          দুর্বুদ্ধি = মন্দ বুদ্ধি

দুর্নীতি = মন্দ নীতি                      বিনম্র = বিশেষভাবে নম্র

বিপথ = নিকৃষ্ট পথ                       ফি বছর = বছর বছর

গরমিল = মিলের অভাব                 লম্বাটে = ঈষৎ লম্বা

ফিকালাল = ঈষৎ লাল                   হা-ভাত = ভাতের অভাব

প্রশ্ন: ব্যাকরণ কাকে বলে?

ব্যাকরণ: ব্যাকরণের যথার্থ পরিচয় প্রকাশের জন্য ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সংজ্ঞাটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাঁর মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে শাস্ত্রকে বলে সে ভাষার ব্যাকরণ।

অন্যভাবে বলা যায়, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ, প্রকৃতি ও প্রয়োগরীতি নির্ণয় করা হয় এবং তার সাহায্যে শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ করে ভাষাকে শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।

ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের মতে, যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করে এর বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা রচনাকালে আবশ্যকমতো সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য প্রয়োগ সম্ভবপর হয়ে ওঠে, তার নাম ব্যাকরণ।

ডক্টর মুনীর চৌধুরীর মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।