Category Archives: বাংলা

অধিবর্ষ

সাধারণভাবে পৃথিবীতে সৌর বৎসর গণনা করা ৩৬৫ পার্থিব দিনে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সূর্যকে আবর্তন করতে পৃথিবীর মোট সময় লাগে ৩৬৫.২৪২ পার্থিব দিন। সাধারণভাবে এই সময় গণনা করা হয় ৩৬৫.২৫ পার্থিব দিন। এই অতিরিক্ত সময় (.২৫ সৌরদিন) চার বৎসর পর ১ পার্থিব দিনের সমান হয়। চার বৎসরে পাওয়া এই বাড়তি ১ দিন বৎসরে সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে ওই বৎসরে পার্থিব দিনের সংখ্য দাঁড়ায় ৩৬৬ পার্থিব দিন। এই বাড়তি দিন যুক্ত করে ৩৬৬ দিনে যে বৎসর গণনা করা হয়, তাকে বলা হয় অধিবর্ষ।

যে সমস্ত বৎসরকে ৪ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, সে সকল বৎসরে
 সাথে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খ্রিষ্টাব্দের সাথে এই বাড়তি দিন যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪৫ অব্দে (জুলিয়ান পঞ্জিকা চালু হওয়ার সময়)। সাধারণ বৎসরগুলোতে ফেব্রুয়ারি মাস গণনা করা হয় ২৮ দিনে। কিন্তু অধিবর্ষে ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে।

১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকা প্রবর্তিত হলে- অধিবর্ষের নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেহেতু ৩৬৫.২৪২ পার্থিব দিনের বৎসরকে ৩৬৫.২৫ পার্থিব দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রতি বৎসরই হিসাবে কিছুটা বাড়তি থেকে যায়। এই কারণে প্রতি শতাব্দীতে একটি দিন বাদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে সকল বৎসরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল থাকে না, সে সকল বৎসরের ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন গণনা করা হয়। অর্থাৎ ওই বৎসরকে অধিবর্ষ বলা হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিট প্রশ্ন (২০১২ – ২০১৩) সমাধান – বাংলা

১. বঙ্গ-কামরূপী থেকে সৃষ্ট একটি ভাষা বাংলা, অপর ভাষা কোনটি?
       ক. অসমিয়া
       খ. উড়িয়া
       গ. হিন্দি
       ঘ. ব্রজবুলি
উত্তর: ক. অসমিয়া
লিঙ্ক: উইকিপিডিয়া
২. প্রজাপতির দুই পক্ষ- কথাটির প্রজাপতি বলতে বোঝানো হয়েছে-
       ক. বিরল প্রজাতির পতঙ্গ
       খ. বরকনে উভয় পক্ষ
       গ. ব্রহ্মা
       ঘ. প্রজাবৎসল জমিদার
উত্তর: গ. ব্রহ্মা
লিঙ্ক: হৈমন্তী
৩. প্রমথ চৌধুরীর মতে পৃথিবীতে শ্রেণিভেদ নেই কোথায়?
       ক. কলারাজ্যে
       খ. রঙ্গভূমিতে
       গ. খেলার ময়দানে
       ঘ. মনোজগতে
উত্তর: গ. খেলার ময়দানে
লিঙ্ক: সাহিত্যে খেলা
৪. বাঙালির বিষ- কথাটি বলতে শরৎচন্দ্র বুঝিয়েছেন-
       ক. জীবনঘাতী বিষক্রিয়া
       খ. কঠিন প্রতিশোধস্পৃহা
       গ. ক্ষণস্থায়ী ক্রোষ (ক্রোধ)*
       ঘ. অনিংশেষ বিদ্বেষ
উত্তর: গ. ক্ষণস্থায়ী ক্রোষ (ক্রোধ)
লিঙ্ক: বিলাসী
*প্রশ্নে বানানটি ভুল ছিল
৫. রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নাকের দড়ি- বলতে বুঝিয়েছেন-
       ক. নাকফুল
       খ. বাধ্য করার অস্ত্র
       গ. নোলক
       ঘ. ফাঁসির রজ্জু
উত্তর: খ. বাধ্য করার অস্ত্র
লিঙ্ক: অর্ধাঙ্গী
৬. দফতরি- শব্দের অর্থ-
       ক. ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী
       খ. অফিসের প্রহরী
       গ. অফিসের রীতিনীতি
       ঘ. বাঁধাইকর
উত্তর: গ. অফিসের রীতিনীতি
৭. একটি তুলসী গাছের কাহিনী-তে গল্প-প্রেমিক?
       ক. মতিন
       খ. কাদের
       গ. মোদাব্বের
       ঘ. হাবিবুল্লা
উত্তর: খ. কাদের
লিঙ্ক: একটি তুলসী গাছের কাহিনী
৮. রামদা- শব্দে রাম উপসর্গটি ব্যবহৃত-
       ক. ধারালো অর্থে
       খ. বৃহৎ অর্থে
       গ. ভয়ংকর অর্থে
       ঘ. বিশেষ অর্থে
উত্তর: খ. বৃহৎ অর্থে
লিঙ্ক: উপসর্গ
৯. ১/৪ এর সংখ্যাবাচক শব্দ নয়-
       ক. চৌথাই
       খ. সিকি
       গ. পোয়া
       ঘ. পৌনে
উত্তর: ঘ. পৌনে
লিঙ্ক: সংখ্যাবাচক শব্দ
১০. Forgery শব্দের বাংলা পরিভাষা-
       ক. ফৌজদারি
       খ. জালিয়াতি
       গ. বলপ্রয়োগকারী
       ঘ. দালালি
উত্তর: খ. জালিয়াতি
১১. কোন শব্দটির পুরুষবাচক রূপ নেই-
       ক. সতী
       খ. ঠাকরুন
       গ. ঝি
       ঘ. ষোড়শী
উত্তর: ক. সতী
লিঙ্ক: পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (লিঙ্গ)
১২. একটু শব্দের টু- কী?
       ক. প্রত্যয়
       খ. অনুসর্গ
       গ. পদাশ্রিত নির্দেশক
       ঘ. অব্যয়
উত্তর: গ. পদাশ্রিত নির্দেশক
লিঙ্ক: পদাশ্রিত নির্দেশক
১৩. কোনটি অপপ্রয়োগের দৃষ্টান্ত?
       ক. উপর্যুক্ত
       খ. মিথস্ক্রিয়া
       গ. ধসপ্রাপ্ত
       ঘ. একত্রিত
উত্তর: গ. ধসপ্রাপ্ত
১৪. ণ-ত্ব বিধি অনুসারে কোন বানানটি ভুল?
       ক. পুরোনো
       খ. ধরন
       গ. পরগণা
       ঘ. রূপায়ণ
উত্তর: খ. ধরন
লিঙ্ক: ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান
১৫. পোর্তুগিজ আনানস বাংলায় হয়েছে আনারস।– এটি কোন ধরনের পরিবর্তন?
       ক. সাদৃশ্যগত
       খ. বৈসাদৃশ্য
       গ. অর্থগত
       ঘ. ধ্বনিতাত্ত্বিক
উত্তর:
১৬. আইলা ও কিরিচ কোন ভাষার শব্দ?
       ক. মেক্সিকান
       খ. মালয়
       গ. ফরাসি
       ঘ. ইতালীয়
উত্তর: খ. মালয়
১৭. মানুষ সূর্যোদয়ে আনন্দিত হয় এবং কিছু মানুষ রাত্রির আগমনে শঙ্কিত হয়।– কোন ধরনের বাক্য?
       ক. মিশ্র বাক্য
       খ. জটিল বাক্য
       গ. সরল বাক্য
       ঘ. যৌগিক বাক্য
উত্তর: ঘ. যৌগিক বাক্য
লিঙ্ক: বাক্যের শ্রেণীবিভাগ
১৮. Bad workman quarrels with his tools.- এর অর্থ হল-
       ক. নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা
       খ. এক হাতে তালি বাজে না
       গ. খারাপ কর্মী ঝগড়া করে
       ঘ. কাজ জানলে কাজি, না জানলে পাজি
উত্তর: ক. নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা
১৯. উৎ- ‍উপসর্গটি কোন শব্দে ভিন্নার্থে প্রযুক্ত?
       ক. উৎপন্ন
       খ. উৎকোচ
       গ. উৎকট
       ঘ. উৎপাত
উত্তর: ক. উৎপন্ন
লিঙ্ক: উপসর্গ
২০. শুদ্ধ বানানগুচ্ছ কোনটি?
       ক. বিভীষিকা, শারীরিক, সমীচিন, পিপীলিকা
       খ. অদ্ভুত, উদ্ভূত, অন্তর্ভূত, পরাভূত
       গ. পূর্বাহ্ন, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ, আহ্নিক
       ঘ. নির্ণিমেষ, নির্ণয়, দুর্নীতি, দুর্নাম
উত্তর: গ. পূর্বাহ্ন, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ, আহ্নিক
শুদ্ধ বানান: সমীচীন, অন্তর্ভূক্ত, নির্নিমেষ
২১. কোন শব্দে বাংলা উপসর্গের প্রয়োগ ঘটেছে?
       ক. আবেগ
       খ. আকাশ
       গ. আঢাকা
       ঘ. আকর্ণ
উত্তর: গ. আঢাকা
লিঙ্ক: উপসর্গ
২২. আহত- বিশেষণ পদের বিশেষ্য রূপ-
       ক. আক্রমণ
       খ. আক্রান্ত
       গ. নির্যাতন
       ঘ. আঘাত
উত্তর: ঘ. আঘাত
২৩. বড়ো বড়ো গাছ- কথাটিতে দ্বিরুক্তির ব্যবহার হয়েছে-
       ক. বহুবচন বোঝাতে
       খ. বিশেষণ অর্থে
       গ. সংখ্যা বোঝাতে
       ঘ. সমষ্টিবাচকতা বোঝাতে
উত্তর: ক. বহুবচন বোঝাতে
লিঙ্ক: দ্বিরুক্ত শব্দ
২৪. কোন শব্দযুগল ভিন্নার্থক নয়?
       ক. শিকার, স্বীকার
       খ. নবনী, ননি
       গ. শর, ষড়
       ঘ. ধুম, ধূম
উত্তর: ঘ. ধুম, ধূম
২৫. নিচের অশুদ্ধ সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
       ক. সু+অল্প = স্বল্প
       খ. অনু+এষণ = অন্বেষণ
       গ. আদ্য+অন্ত = আদ্যন্ত
       ঘ. ভৌ+উক = ভাবুক
উত্তর: গ. আদ্য+অন্ত = আদ্যন্ত
লিঙ্ক: সন্ধি

সমাস ও সন্ধির মধ্যে পার্থক্য

সমাস
১. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততধিক পদের এক পদে মিলনের নাম সমাস।
২. পদ ও পদের মিলনে সমাস হয়।
৩. সমাস ছয় প্রকার, যথা : (ক) দ্বন্দ্ব, (খ) দ্বিগু, (গ) কর্মধারয়, (ঘ) তত্পুরুষ, (ঙ) অব্যয়ীভাব ও (চ) বহুব্রীহি
৪. সমাস বাক্যকে সংক্ষেপ করে
৫. যেসব পদে সমাস হয় তাদের বিভক্তি সাধারণত লোপ পায়। কেবল অলুক দ্বন্দ্বে বিভক্তি লোপ পায় না।
৬. সমাস লক্ষ রাখে অর্থের দিকে।
৭. সন্ধিতে দুই বর্ণের মাঝে যোগ চিহ্ন (+) ব্যবহার করা হয়। ৮. সপ্ত (সাত) অহের (দিনের) সমাহার=সপ্তাহ

সন্ধি
১. পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধ্বনির একত্র মিলনকে সন্ধি বলা হয়।
২. দুটি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনে হয় সন্ধি।
৩. বাংলা ভাষায় সন্ধি উত্সগত দিক দিয়ে দুই প্রকারের, যথা : তত্সম শব্দের সন্ধি ও বাংলা শব্দের সন্ধি। বাংলা শব্দের সন্ধি গঠনগত দিক দিয়ে দুই প্রকার, যথা : (ক) স্বও সন্ধি ও (খ) ব্যঞ্জন সন্ধি। আর তত্সম শব্দের সন্ধি গঠনগত দিক দিয়ে তিন প্রকার, যথা : (ক) স্বর সন্ধি, (খ) ব্যঞ্জন সন্ধি ও (গ) বিসর্গ সন্ধি।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে পার্থক্য

স্বরবর্ণ
১. স্ব্বরধ্বনি প্রকাশক সাঙ্কেতিক চিহ্নই স্বরবর্ণ।
২. স্বরবর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং নিজে নিজেই উচ্চারিত হতে পারে।
৩. স্বরবর্ণ উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস মুখগহ্বরের কোথাও বাধা পায় না।
৪. স্বরবর্ণের দৃশ্য ও শ্রতিস্বরূপ আছে।
৫. অ, আ, ই ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনবর্ণ
১. ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকাশক সাঙ্কেতিক চিহ্নই ব্যঞ্জনবর্ণ।
২. ব্যঞ্জনবর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় অর্থাত্ স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না।
৩. উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস মুখগহ্বরের কোথাও বাধাপ্রাপ্ত বা ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয়।
৪. ব্যঞ্জনবর্ণেও দৃশ্যরূপ আছে, শ্রুতিরূপ নেই।
৫. ক, খ, গ ইত্যাদি।

বহু নির্বাচনী প্রশ্ন

১। পৃথিবীর প্রায় কত কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে?
ক. দশ কোটি খ. পঁয়ত্রিশ কোটি
গ. পঁচিশ কোটি ঘ. আড়াই কোটি

২। ভাষার কোন রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পূর্ণরূপে ব্যবহৃত হয়?
ক. চলিত রীতি খ. সাধু রীতি
গ. আঞ্চলিক রীতি ঘ. সব কয়টি

৩। ‘পুরুষ’, ‘বচন’ ব্যাকরণের কোন অংশে আলোচিত হয়?
ক. রূপতত্ত্বে খ. বাক্যতত্ত্বে
গ. ধ্বনিতত্ত্বে ঘ. বর্ণমালায়

৪। ধ্বনির মূল উৎস কী?
ক. বাতাস খ. মুখবিবর
গ. গলনালি ঘ. ফুসফুস
৫। নিচের কোনটি যৌগিক স্বরধ্বনি?
ক. ঔ খ. এ গ. ই ঘ. ও
৬। ‘যাবজ্জীবন’ শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?
ক. যাবদ+জীবন খ. যাবজ+জীবন
গ. যাবৎ+জীবন ঘ. যাবয+জীবন
৭। বৃহস্পতি শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ কোনটি?
ক. বৃহঃ+পতি খ. বৃহৎ+পতি
গ. বৃহস+পতি ঘ. বৃহ+স্পতি
৮। প্রকৃতির শেষে যুক্ত হয়ে যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি নতুন শব্দ গঠন করে তাকে কী বলে?
ক. বিভক্তি খ. প্রত্যয়
গ. অনুসর্গ ঘ. উপসর্গ
৯। নিচের কোন শব্দটি ‘ইংরেজি’ ও ‘তৎসম’ শব্দযোগে গঠিত মিশ্র শব্দ?
ক. খ্রিস্টাব্দ খ. ডাক্তারখানা
গ. হাটবাজার ঘ. রাজা-বাদশাহ
১০। নিচের কোনটি যোগরূঢ় শব্দ?
ক. সন্দেশ খ. মধুর
গ. জলধি ঘ. পড়ুয়া
১১। নিচের কোনটি সাকুল্যবাচক সর্বনাম?
ক. যে সে খ. উভয়
গ. উনি ঘ. স্বয়ং
১২। কোনটি নিত্য স্ত্রীবাচক শব্দ?
ক. ঠাকুরঝি খ. ললনা
গ. শ্যালিকা ঘ. ভাগনি
১৩। কোন ব্যাকরণে প্রতিটি কারকের জন্য শব্দবিভক্তির নির্দিষ্ট রূপ আছে?
ক. বাংলা খ. সংস্কৃত
গ. ইংরেজি ঘ. ফারসি
১৪। নিচের কোনটি ফরাসি শব্দ নয়?
ক. ডিপো খ. রেস্তোরাঁ
গ. কৃপণ ঘ. তারিখ
১৫। ‘ভূগোল’ শব্দটির বিশেষণ পদ কোনটি?
ক. ভৌগোলিক খ. ভূগোলিক
গ. ভূগোলক ঘ. ভৌগুলিক
১৬। বহুবচন প্রকাশে কোন সমষ্টিবাচক শব্দটি ব্যবহৃত হয়?
ক. মালা খ. খানি গ. খানা ঘ. টি
১৭। সরিষা দিয়ে তৈল হয়। নিম্নরেখ পদটি কোন কারকে কোন বিভক্তি?
ক. করণ কারকে তৃতীয়া
খ. কর্মে দ্বিতীয়া
গ. অপাদান কারকে তৃতীয়া
ঘ. অধিকরণে তৃতীয়া
১৮। নিচের কোনটি অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের উদাহরণ?
ক. ঘিয়ে ভাজা খ. হাতে কলমে
গ. ধন দৌলত ঘ. দিন রাত
১৯। পূর্বপদ বিশেষ্য ও এবং পরপদ ক্রিয়াবাচক হলে কোন বহুব্রীহি সমাস হয়?
ক. সমানাধিকরণ খ. ব্যধিকরণ
গ. অন্ত্যপদলোপী ঘ. ব্যতিহার
২০। আবেগ প্রকাশক অব্যয় পদ সাধারণত বাক্যের কোথায় বসে?
ক. শুরুতে খ. শেষে
গ. মাঝখানে ঘ. কোথাও না
২১। নিচের কোনটি জটিল বাক্য?
ক. আমার হারানো বইটি ফিরে পেয়েছি
খ. যেহেতু সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি
গ. নদীর জল চল্ চল্ চলছে তার বিরাম নেই
ঘ. মিথ্যাবাদী বালককে কেউ ভালোবাসে না
২২। দুটি বাক্যের মধ্যে অর্থের সম্বন্ধ থাকলে কোন চিহ্ন বসবে?
ক. কমা খ. সেমিকোলন
গ. দাঁড়ি ঘ. প্রশ্নচিহ্ন
২৩। কৃত-প্রত্যয়ান্ত শব্দের আগে উপসর্গ ছাড়া অন্য পদ থাকলে তাকে কোন পদ বলে?
ক. প্রত্যয়ান্ত পদ খ. উপপদ
গ. সমাসবদ্ধ পদ ঘ. সমস্ত পদ
২৪। কোনটির আগে স্ত্রীবাচক শব্দ যোগ করে লিঙ্গান্তর করতে হয়?
ক. দেবর খ. নেতা
গ. সাধক ঘ. শিল্পী
২৫। ক্ষুদ্রার্থে স্ত্রীবাচক শব্দ কোনটি?
ক. ননদ খ. দিদি
গ. নাটিকা ঘ. নাতনি
২৬। সর্বাঙ্গে ব্যথা ঔষধ দিব কোথা? নিম্নরেখ শব্দটি কোন কারকে কোন বিভক্তি?
ক. করণে সপ্তমী খ. কর্তায় সপ্তমী
গ. কর্মে সপ্তমী ঘ. অধিকরণে সপ্তমী
২৭। কোনটি ভাববাচক বিশেষ্য?
ক. বীরত্ব খ. বৌদ্ধ
গ. গমন ঘ. সমিতি
২৮। শব্দের আগে বসে কোনটি?
ক. অনুসর্গ খ. উপসর্গ
গ. প্রত্যয় ঘ. বিভক্তি
২৯। নিচের কোনটি বিদেশি ধাতু?
ক. চল্ খ. শুন্ গ. গতি ঘ. ডর্
৩০। কোন বাক্যটি নিত্যবৃত্ত অতীত?
ক. তুমি করলে খ. তুমি করতে
গ. তুমি করেছিলে ঘ. তুমি করছিলে
৩১। ‘দীর্ঘজীবী ব্যক্তি’ কথাটি নিচের কোন বাগধারাটি দিয়ে প্রকাশ করা হয়?
ক. কুঁড়ের বাদশাহ খ. কংস মামা
গ. কাক ভূষণ্ডী ঘ. কেতাদুরস্ত
৩২। ‘ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া’_প্রবাদ প্রবচনটির অর্থ কী?
ক. কষ্ট করলে বিনাশ নাই
খ. ব্যথার উপরে ব্যথা দেওয়া
গ. অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হওয়া
ঘ. না বুঝে কাজ করা
৩৩। ‘সহজে যা ছাড়ে না’_কথাটি কোন বাগধারাটি দিয়ে প্রকাশ করা হয়?
ক. কুপোকাত খ. কচ্ছপের কামড়
গ. কম্বলের লোম বাছা
ঘ. কাঁঠালের আমসত্ত্ব
৩৪। কথায় বর্ণনা করা যায় না_এক কথায় কী বলে?
ক. অকথ্য খ. অবর্ণনীয়
গ. অনির্বচনীয় ঘ. কিংকর্তব্যবিমূঢ়
৩৫। কোনটি ‘কুসুম’ শব্দের প্রতিশব্দ?
ক. প্রসূন খ. গন্ধ বহ
গ. প্রমদা ঘ. মহী
৩৬। ‘বাত্যা’ শব্দটি কোন শব্দের প্রতিশব্দ?
ক. উদক খ. তুফান
গ. মুকুট ঘ. কষ্ট
৩৭। ‘প্রাচ্য’ শব্দটির বিপরীতার্থক শব্দ কোনটি?
ক. অপ্রাচ্য খ. প্রতীচ্য
গ. অপ্রতিচ্য ঘ. প্রতিচ্য
৩৮। Anthology-এর পরিভাষা কোনটি?
ক. শিল্প প্রদর্শনী খ. সাহিত্য-সংকলন
গ. দায়বদ্ধতা ঘ. সপক্ষতা
৩৯। ‘জনরব শুনে যে হাজির হয়’_তাকে এক কথায় কী বলা হয়?
ক. জনশ্রুতি খ. রবাহূত
গ. রবাহাজির ঘ. রবাহাত
৪০। ‘যামিনী’-এর প্রতিশব্দ কোনটি?
ক. শর্বরী খ. সংগ্রাম
গ. নিকর ঘ. কলেবর
৪১। অনুবাদকে মূলত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
ক. তিন ভাগে খ. দুই ভাগে
গ. চার ভাগে ঘ. পাঁচ ভাগে
৪২। কোন জাতীয় অনুবাদে স্বাধীনতা খর্ব হয়?
ক. ভাবানুবাদে খ. আক্ষরিক অনুবাদে
গ. ইংরেজি অনুবাদে ঘ. বাংলা অনুবাদে
৪৩। অনুবাদের ভাষায় কী থাকা উচিত নয়?
ক. প্রাঞ্জলতা খ. সরলতা
গ. জটিলতা ঘ. স্পষ্টতা
৪৪। It is a long story-এর অনুবাদ কোনটি?
ক. এটি একটি লম্বা গল্প
খ. সে অনেক কথা
গ. এটি হয় একটি লম্বা গল্প
ঘ. এটি হয় একটি দীর্ঘ কথা
৪৫। Practice makes a man perfect-এর সঠিক অনুবাদ কোনটি?
ক. অভ্যাস একজন মানুষকে পরিপূরক করে
খ. অভ্যাস মানুষের দাস
গ. গাইতে গাইতে গায়েন
ঘ. অভ্যাস একজন মানুষকে সঠিক করে
৪৬। পত্রের কোনটিকে মূল অংশ বলা হয়?
ক. সম্বোধন খ. পত্র গর্ভ
গ. নাম-ঠিকানা ঘ. শিরোনাম
৪৭। সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য হারানো বিজ্ঞপ্তি কোন ধরনের পত্র?
ক. অভিযোগ পত্র খ. বিজ্ঞাপন পত্র
গ. আবেদন পত্র ঘ. চুক্তিপত্র
৪৮। কোন পত্র আসলে পত্র নয়?
ক. ব্যক্তিগত পত্র খ. আবেদন পত্র
গ. মানপত্র ঘ. চুক্তিপত্র
৪৯। কোন শ্রেণীর পত্রে জীবনবৃত্তান্ত উল্লেখ করতে হয়?
ক. ব্যক্তিগত পত্রে খ. সংবর্ধনা পত্রে
গ. চাকরির আবেদন পত্রে
ঘ. সংবাদপত্রের চিঠিতে
৫০। আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে যে দাওয়াত পত্র তাকে কী বলে?
ক. নিমন্ত্রণ পত্র খ. আমন্ত্রণ পত্র
গ. অভিন্দন পত্র ঘ. মানপত্র
উত্তর: ১. গ ২. খ ৩. ক ৪. ঘ ৫. ক ৬. গ ৭. খ ৮. খ ৯. ক ১০. গ ১১. খ ১২. খ ১৩. খ ১৪. ঘ ১৫. ক ১৬. ক ১৭. গ ১৮. খ ১৯. খ ২০. ক ২১. খ ২২. খ ২৩. খ ২৪. ঘ ২৫. গ ২৬. ঘ ২৭. গ ২৮. খ ২৯. ঘ ৩০. খ ৩১. গ ৩২. গ ৩৩. খ ৩৪. গ ৩৫. ক ৩৬. খ ৩৭. খ ৩৮. খ ৩৯. খ ৪০. ক ৪১. খ ৪২. খ ৪৩. গ ৪৪. খ ৪৫. গ ৪৬. খ ৪৭. খ ৪৮. গ ৪৯. গ ৫০. ক।

বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি – ১৭টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর

১। যে ক্রিয়া পদের কর্ম থাকে তাকে বলে

ক) অকর্মক ক্রিয়া খ) সকর্মক ক্রিয়া 

গ) প্রযোজক ক্রিয়া ঘ) অসমাপিকা ক্রিয়া

২। অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে বলেÑ

ক) বর্ণ খ) পদ গ) শব্দ ঘ) প্রত্যয়

৩। শব্দের ুদ্রতম একক কোনটি?

ক) বর্ণ    খ) স্বরবর্ণ গ) ব্যঞ্জনবর্ণ  ঘ) ধ্বনি 

৪। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে বলেÑ

ক) বর্ণ খ) ধ্বনি গ) বাক্য ঘ) পদ

৫। শব্দকে পদ হতে হলে তার সাথে কী যুক্ত থাকতে হয়?

ক) প্রত্যয় খ) বিভক্তি  গ) অনুসর্গ ঘ) উপসর্গ

৬। পদের গঠনে কয়টি অর্থযুক্ত অংশ থাকে?

ক) একটি খ) দু’টি গ) তিনটি ঘ) চারটি

৭। প্রকৃতি কয় প্রকার?

ক) ২ প্রকার খ) ৩ প্রকার গ) ৪ প্রকার ঘ) ৫ প্রকার

৮। ক্রিয়া প্রকৃতির অন্য নাম কী?

ক) উপসর্গ খ) অনুসর্গ গ) প্রত্যয় ঘ) ধাতু

৯। বিভক্তি কয় প্রকার?

ক) দুই খ) তিন গ) চার ঘ) পাঁচ

১০। নাম প্রকৃতির সাথে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলেÑ

ক) ধাতু খ) প্রত্যয় গ) শব্দ বিভক্তি ঘ) ক্রিয়া বিভক্তি

১১। প্রত্যয় কত প্রকার?

ক) ২ প্রকার খ) ৩ প্রকার 

গ) ৪ প্রকার ঘ) ৫ প্রকার

১২। কৃৎপ্রত্যয় কিসের শেষে যুক্ত হয়?

i. ক্রিয়া প্রকৃতি i i. ধাতু i i i. উপসর্গ

নিচের কোনটি সঠিক?

ক) iও i i খ) i ও i i i গ) i i ও i i i ঘ) i, i i ও i i i

১৩। তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দ কোনটি?

ক) পড়া খ) খাওয়া গ) মোগলাই ঘ) চলা

১৪। ‘বার্ষিক’ শব্দটির সঠিক প্রকৃতি ও প্রত্যয় কোনটি?

ক) বার+সিক (খ) বর্ষ+ইক 

(গ) ব+রষিক (ঘ) বরষ+ইক

১৫। প্রত্যয় সাধিত শব্দ কোনটি?

ক) সুশ্রী খ) সফল  গ) জেলে ঘ) মহাত্মা

১৬। সাধারণত পদ কয় প্রকার?

ক) তিন খ) চার  গ) পাঁচ ঘ) ছয়

১৭। নামপদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?

ক) ২ খ) ৩ গ) ৪ ঘ) ৫

উত্তর : ১. খ, ২. গ, ৩. ঘ, ৪. ঘ, ৫. খ, ৬. খ, ৭. ক, ৮. ঘ, ৯. ক, ১০. গ, ১১. ক, ১২. ক, ১৩. গ, ১৪. খ, ১৫. গ, ১৬. ঘ, ১৭. গ।

সমাসের রীতি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে

২০১৪ সালের এসএসসির প্রস্তুতি-৭
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন  অংশ-৭
প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থী, শুভেচ্ছা নিও। আজ বাংলা ২য় পত্রের কিছু বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।
পদাশ্রিত নির্দেশক
৩. ‘নির্দেশক সর্বনাম’-এর সঙ্গে টা, টি যুক্ত হলে তা কী হয়?
ক. উৎকৃষ্ট খ. নিকৃষ্ট গ. অস্পষ্ট ঘ. সুনির্দিষ্ট
সঠিক উত্তর: ঘ. সুনির্দিষ্ট
৪. পদাশ্রিত নির্দেশকের অপর নাম কী?
ক. পদাশ্রিত অব্যয় খ. পদান্বয়ী অব্যয়
গ. সমুচ্চয়ী অব্যয় ঘ. অব্যয়
সঠিক উত্তর: ক. পদাশ্রিত অব্যয়
৫. পদাশ্রিত নির্দেশক সাধারণত পদের কোথায় বসে?
ক. আগে খ. শেষে গ. মাঝে ঘ. প্রথমে
সঠিক উত্তর: খ. শেষে।
সমাস
১. ‘সমাস’ শব্দের অর্থ কী?

ক. সংক্ষেপণ খ. বিশ্লেষণ
গ. সংযোজন ঘ. সংকলন
সঠিক উত্তর: ক. সংক্ষেপণ
২. সমাসের রীতি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক. সংস্কৃত খ. আরবি গ. ফারসি ঘ. ইংরেজি
সঠিক উত্তর: ক. সংস্কৃত
৩. ব্যাসবাক্যের অপর নাম কী?
ক. যৌগিক বাক্য খ. বিগ্রহবাক্য
গ. সরল বাক্য ঘ. জটিল বাক্য
সঠিক উত্তর: খ. বিগ্রহবাক্য
৪. বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্যের যে সমাস হয়, তার নাম কী?
ক. কর্মধারয় খ. দ্বন্দ্ব গ. তৎপুরুষ ঘ. বহুব্রীহি
সঠিক উত্তর: ক. কর্মধারয়
৫. কর্মধারয় সমাসে কোন পদ প্রধান?
ক. পরপদ খ. অন্যপদ
গ. পূর্বপদ ঘ. সমস্তপদ
সঠিক উত্তর: ক. পরপদ
৬. সমাস নিষ্পন্ন পদটির নাম কী?
ক. ব্যাসবাক্য খ. সমস্তপদ
গ. বিগ্রহপদ ঘ. পূর্বপদ
সঠিক উত্তর: খ. সমস্তপদ
৭. যে যে পদে সমাস হয়, তাদের প্রতিটি—
ক. সমাস বাক্য খ. সমস্তপদ
গ. পূর্বপদ ঘ. সমস্যমান পদ
সঠিক উত্তর: ঘ. সমস্যমান পদ
৮. দ্বিগু সমাস নিষ্পন্ন পদটি কোন পদ হয়?
ক. বিশেষ্য খ. সর্বনাম গ. অব্যয় ঘ. বিশেষণ
সঠিক উত্তর: ক. বিশেষ্য
৯. কোনটিতে পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পায়?
ক. অব্যয়ীভাব সমাস খ. কর্মধারয় সমাস
গ. দ্বিগু সমাস ঘ. বহুব্রীহি সমাস
সঠিক উত্তর: ক. অব্যয়ীভাব সমাস
১০. পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয়ে কোন সমাস গঠিত হয়?
ক. উপপদ খ. পরপদ গ. মধ্যপদ ঘ. দ্বন্দ্ব
সঠিক উত্তর: ক. উপপদ
১১. ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে কোন বহুব্রীহি সমাস হয়?
ক. ব্যতিহার খ. উপসিত
গ. ব্যাধিকরণ ঘ. সমাধিকরণ
সঠিক উত্তর: ক. ব্যতিহার
১২. অলুক দ্বন্দ্ব সমাস কোনটি?
ক. দুুধে-ভাতে খ. বউ-ভাত
গ. হাত-পা ঘ. কাঁচামিঠা
সঠিক উত্তর: ক. দুুধে-ভাতে
১৩. উপমিত কর্মধারয় সমাস কোনটি?
ক. মুখচন্দ্র খ. শুভ্র গ. মহারাজ ঘ. মহাকীর্তি
সঠিক উত্তর: ক. মুখচন্দ্র
১৪. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস কোনটি?
ক. চিরসুখী খ. জ্ঞানশূন্য
গ. নরাধম ঘ. মহামানব
সঠিক উত্তর: ক. চিরসুখী।

শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

prothom-alo.com

বাংলা ভাষার গতিপ্রকৃতি

বাংলা ভাষা এখন যেরকম লেখা হয় সেটা কি খুব নতুন লাগে? ৪০/ ৫০ বছর আগে যেমন ছিল তেমনি আছে, না বদলে গেছে?

কিছু রীতি নতুন লাগতে পারে। বক্তব্য হয়তো খুবই সিরিয়াস কিন্তু লেখা শুরু হল ‘ইয়ে’ দিয়ে। এরকমটা আগেও ছিল। অনেকদিন আগে দেশ পত্রিকায় প্রণব বর্ধনের একটা লেখা শুরু হয়েছিল ‘আরে মশাই’ দিয়ে, ‘আরে মশাই ভালোই আছি বিদেশে।’ দীর্ঘ রচনায় প্রতিটি নতুন যুক্তি এবং কাউন্টার-যুক্তি শুরু হচ্ছে ‘কী বললেন’, ‘আরে না না’ ‘বুঝছেন না কেন’ ইত্যাদি দিয়ে — কাল্পনিক কথোপকথন স্টাইলে। রম্যরচনা লেখার এটাই রীতি। রম্যরচনার বিষয় যে সবসময় হালকা হবে তা নয়। ইদানীংকালে বাংলায় রম্যরচনার প্রাধান্য বাড়ছে।

কিন্তু সেইসঙ্গে আবার পরিশীলিত ভাষায় লেখার প্রবণতাও বাড়ছে। গাওয়াকে গায়ন বলা, লেখাকে লেখন। আরেকটিও আছে, আগেও ছিল এখনও আছে — লেখার মধ্যে কবিত্বভাব। লেখক যখন নেহাত শিশু, পিসেমশায়ের তবলায় একটা চাঁটি মেরেছিলেন, এক বিখ্যাত শিল্পীর উপস্থিতিতে। লেখকের মানবজীবন সেই যে ধন্য হল, ধন্যই রয়ে গেল।

সমাজের ও তৎসংশ্লিষ্ট সংস্কৃতির ক্রমান্বিত পরিবর্তনের ফলে লেখার রীতি বদলে যায়, ভাষার গঠন সহজে বদলায় না। সেটা হয় প্রভাবশালী লেখকদের সচেতন চেষ্টাতে এবং পাঠকের সম্মতি ও সহযোগিতায়।

বাংলা ভাষার নির্মানের সময়ে কিছু জিনিস সংস্কৃত থেকে নেওয়া হয়েছিল। ধাতুকে বিশেষ্যপদে রূপান্তরিত করার উপায়, বিশেষ্য থেকে বিশেষণ ও বিশেষণ থেকে বিশেষ্য বানানোর কায়দাকানুন, এসব আমরা সংস্কৃত থেকে শিখেছিলাম। নতুন শব্দ তৈরি করতে এগুলো এখনও বেশ কাজে আসে।

গদ্যভাষার দুটো রূপ প্রায় প্রথম থেকেই পাশাপাশি চলত, সাধু ও চলিত। পার্থক্যটা ক্রিয়ারূপের। সাধু ভাষাতে শুধুমাত্র সংস্কৃতঘেঁষা শব্দ ব্যবহার করতে হবে এমন কিন্তু নয়। ‘তখন সবে বোল ফুটিয়াছে একটি ঝাড়ু লইয়া খেলা করিতেছিলাম। মা ঘরকন্না সামলাইতে ব্যস্ত ছিলেন। ঝাড়ুতে আমাতে নানা বিষয়ে কথা হইতেছিল।’ বোল, ঝাড়ু, সামলাইতেছিলেন এগুলো তৎসম শব্দ নয়, বোধহয় তদ্ভবও নয়।

সংস্কৃতর সঙ্গে বাংলার একটা খুব মৌলিক পার্থক্য ছিল, সেটা হল শব্দবিন্যাসের রীতি। সংস্কৃততে শব্দ তার স্বাভাবিক গতিতে বাক্যকে চালিত করে না। যে কোনও পদকে যে কোনও জায়গায় বসানো যায়। বাংলা বাক্যে সেরকমটা ভাবা হয়নি। চাইলেও ভাবা যেতনা, আর ভাবার কোনও দরকারও পড়েনি। বাংলা মূলতই কথ্য ভাষা।

বিশেষ্য বিশেষণের পার্থক্য আমরা জানতাম। কিন্তু একটাকে আরেকটা বলে চালানো যেত। ‘ফিসকাল’ শব্দটাকে এখনকার দিনে বিশেষ্যের মত ধরা হয়। বাংলায় এমন কত হয়েছে! নিয়মের কোনও কড়াক্কড়ি ছিলনা।

প্রভাবশালী লেখকের সচেতন চেষ্টার কথা বলতে গেলে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে হয়। সংস্কৃতে আসক্ত রবীন্দ্রনাথ ভাষার মধ্যে বাংলার নানা জেলার কথ্য ভাষাকে প্রবেশ করিয়েছিলেন। কাজটা করেছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁর হাতিয়ার ছিল কবিতা।

কথ্য ভাষা বলতে ঠিক কী বোঝায়? সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বাচনভঙ্গী আলাদা হয়। কথ্য ভাষা আর লোকভাষা এ-দুটো সমার্থক শব্দ নয়। তখনকার দিনে এবং তারপরেও অনেকদিন পর্যন্ত আমাদের সমাজ গ্রামপ্রধান ছিল। সুতরাং বাংলার লোকভাষা ছিল গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় এই লোকভাষাকে প্রয়োগ করেছিলেন বটে, কিন্তু একটু সন্তর্পণে। মনের কথাটা বোধহয় এরকম ছিল – ‘রাজপথ দিয়ে আসিয়ো না তুমি, পথ ভরিয়াছে আলোকে, প্রখর আলোকে .. বসনে প্রদীপ নিবারি এসো গো গোপনে’। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় লোকভাষার উপস্থিতি খুবই প্রচ্ছন্ন।

রবীন্দ্রনাথের অন্য কাজ ছিল না, অন্তত তিনি তো তাই বলতেন। একটা কাজ নিলেন। এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ‘ভাষা’। কাজটা দুভাবে করেছিলেন
ক) তাদের হয়ে তাদের কথা বলা এবং
খ) তারা যাতে নিজেরাও কথা বলতে শেখে সেই চেষ্টা করা।
প্রথম কাজটা কবিতাতেও কিছু কিছু করেছেন কিন্তু প্রধানত করেছেন গল্পগুচ্ছ-তে। দ্বিতীয় কাজটা সহজ পাঠে।

গল্পে উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ কথ্য ভাষা ব্যবহার করেননি বললেই হয়। শেষের কবিতার ভাষাকে চলতি ভাষা মনে হতে পারে। কিন্তু ওরকম ভাষাতে কেউ কথা বলে না। শেষের কবিতার ভাষা অত্যন্ত সোফিস্টিকেটেড — লোকভাষার স্পর্শমাত্র নেই। রবিবার, শেষ কথা, ‌ ল্যাবরেটরিও তাই। বিশ্বপরিচয়ের ‘লাল-উজানি আলো’ অথবা ‘বেগুনিপারের আলো’কে লোকভাষা বলা চলে না কোনওভাবেই।

লোকভাষার একটা স্তর ব্যবহারিক ভাষা, আরেকটা স্তর মানুষের চিরন্তন কিছু আকাংক্ষার ভাষারূপ। এই দ্বিতীয়টিকেই রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন। ব্যবহারিক ভাষাকে লিখিত ভাষায় আনার কাজটা অন্যরা করেছিলেন।

যে ভাষাতে লেখক নিজে কথা বলেননা, সেই ভাষাতে তিনি লিখবেন কী করে? প্রথমে কানে শোনা, তারপর হৃদয়ে গ্রহণ করা, তারপর শেখা। গরীব মানুষের মুখের ভাষা এভাবেই বাংলা সাহিত্যে অবাধে প্রবেশ করেছে।

ভাষা গঠনে নতুনত্ব আনার ব্যাপারে মাইকেল মধুসূদন কয়েকটি উদাহরণস্থাপনকারী কাজ করেছিলেন। যেটার কথা সবচেয়ে সহজে বলা যায় সেটা হল বিশেষ্য থেকে ক্রিয়া তৈরি করা। ইংরেজিতে এটা খুবই প্রচলিত। টেকচাঁদ ঠাকুর পরিহাস করে লিখেছিলেন বটে ‘টেবিলিলা সূত্রধর, কাপড়িলা তাঁতি’, পরিহাস এইজন্যে যে কাপড়ের সঙ্গে ‘ইল’ অথবা ‘ইলা’ যোগ বেমানান। মধুসূদন যেভাবে প্রয়োগ করেছিলেন তা যথাযথ ছিল। প্রভাবশালী লেখকের সচেতন চেষ্টা তো ছিলই, পাঠকের সম্মতি ও সহযোগিতাও ছিল।

পুরোনোদিনের এইসব কাহিনী বাংলা ভাষার নমনীয়তার পরিচয় বহন করে। আরও অনেক নতুন শব্দ বানানো যায়, নতুনতর প্রয়োগ হতে পারে। উত্তরাধিকার তৈরি হলেও ভালো, না হলেও ভালো। কিছু এসে মিলিয়ে যাবে, কিছু থেকে যাবে।

lotakambal.com

বাংলা ভাষায় ইংরেজী, অলন্দাজ, ফরাসি ও অন্যান্য ভাষার শব্দ

ইংরেজি থেকে আগত শব্দ :

অফিস, ইর্ট, আস্তাবল, এনামেল, এজেন্ট ইঞ্জিন, কংগ্রেস, কনস্টেবল, কফি, কমা, কারগেট, ক্যাপ্টেন, কার্নিস, কলেজ, বেকক, কেটলি, কেয়ার, গেঞ্জি, গেট, গেলাস, চেক, চেন, চেয়ার, জাঁদরেল, জেটি, জিরাফ, জেল, জ্যাকেট, টাইপ, টিকিট, টিফিন, টিন, টেবিল, টেলিফোন, টলিভিশন, টেন্ডার, টেলিগ্রাফ, ট্যাক্সি,, ট্রাম, ট্রেন, ডক, ডজন, ডবল, ডাক্তার, ডিপো, ড্রাম, ড্রেন, থিয়েটার, নম্বও, নিব, পকেট, প্যাকেট, পাউডার, পার্শেল, পালিশ, পাস, পিয়ন, পিন, পুলিশ, প্রেট্রোল, পেন, পেনসন, পেনসিল, পোস্ট অফিস, ফটো, ফুটবল, কোন ফ্রক, ফ্যাশন, ফ্ল্যাট, ফ্যাক্স, বাক্স, বুরুম, বোনাস, বোতল, মাইল মাস্টার, মিটার, মেস, ম্যানেজার, রেল, রেডিও, লেবেল, সার্কাস সার্জন, সিগন্যাল, সান্ত্রি, সেমিকোলন, সেমিজ, সিনেমা, স্টেশন, স্টিমার, শার্ট, হল, হুক, হাইকোর্ট, হাসপাতাল।

ইংরেজি ভাষার মধ্যে দিয়ে বাংলায় আগত শব্দ

ওলন্দাজ থেকে আগত শব্দ :

ওলন্দাজ-ইস্কাবন, ইস্ক্রুপ, তুরুপ, রুইতন, হরতন।

ফরাসি থেকে আগত শব্দ :

কার্তুজ, কাফে, কুপন, রেস্তোরা, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ।

জাপানিক্যারাটে, গেইশ, জু-জুৎ-সু, জুডো, রিক্সা, হাসনাহেনা, হারাকিরি।

হিন্দি : ইস্তক, ওয়ালা, কাহিনী, খাট্টা, খানা, চামেলি, চালু, চাহিদা টহল, ডেমরা, তাগড়া, পানি, ফালতু, বাত, বানি, লু, সাঁটা।

মালয়: কাকাতুয়া, গুদা, কিরিচ, সাগু।

জার্মানি : ফ্যুরার;                    পেরু : কু ইনাইন;

অস্ট্রেলিয়া : ক্যাঙ্গারু;                  ইতালি: ম্যাজেন্টা;

রুশ : বলশেভিক;                       সিংহল :  বেরিবেরি।

গ্রিক : কেন্দ্র, দাম, সুরঙ্গ।             বর্মি: লুঙ্গি, ফুঙ্গি, নাপ্পি;

চীনাচা, চিনি, লিচু।                   গুজরাটি : তকলি, হরতাল।

সাঁওতালি : বোঙ্গা, হাঁড়িয়া।         তামিল : চেট্টি।

পাঞ্জাবিতরকা।                  তিববতি: লামা;

মারাঠি : বরগি।                       দক্ষিণ আফ্রিকা: জেব্রা;

প্রমিত বাংলা ব্যকরণ আর ভাষিক আগ্রাসন বিষয়ে কয়েক প্যারাগ্রাফ

উচ্চারণকে চিহ্নে ধারণ করতে চাওয়া কিংবা শব্দের ভেতরে অনেকগুলো আলাদা উচ্চারণকে শনাক্ত করে সেসব আলাদা আলাদা উচ্চারণকে চিহ্নে ধারণ করা ভাষাবিকৃতি কিংবা ভাষার বিচ্যুতি রোধে অনেক বেশী কার্যকর হয়ে উঠেছিলো, ছাপাখানার আবিস্কার সেসব চিহ্নকে এক ধরণের স্থিরতা এনে দিয়েছে। বর্তমানের কম্পিউটার যুগে সেসব চিহ্নে নানা ধরণের শৈল্পিকতা এবং বাক্যের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ফর্মায় সেসব সংবদ্ধ উচ্চারণচিহ্নকে সাজানোর সুবিধাটুকু এসেছে। কিন্তু যখন কোনো উচ্চারণের কোনো চিহ্নই ছিলো না তখন ভাষা কিভাবে প্রবাহিত হয়েছে ভবিষ্যতে?

ভাষিক আগ্রাসন পৃথিবীর ইতিহাসে সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা নয়, বিভিন্ন প্রাযুক্তিক আবিস্কার ভাষা আগ্রাসনকে এক ধরণের স্থবিরতা এনে দিয়েছে এটুকু বলাই যায়। ভাষাকে চিহ্নিত করার আগেই মানুষ ভাষিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে, সামরিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দক্ষতায় ভাষাকে দখল করেছে বলশালী গোত্র, ঠিকমতো ভাষাকে বুঝে উঠবার আগেই ভাষা বেদখল হয়ে যাওয়ার ইতিহাসও দেখেছে পৃথিবী।

দিগ্বিজয়ী যোদ্ধাদের ঘোড়ার খুরের শব্দের সাথে তাদের মুখের ভাষাও পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে, তারাই নিজেদের মুখের ভাষাকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, একই সাথে ক্ষীণ হলেও পরাজিত মানুষের মুখের ভাষাও বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে। তাদের ম্রিয়মাণ কণ্ঠস্বর, তাদের আত্মগোপন করে থাকবার প্রবনতা কিংবা তাদের গোত্রাহংকার তাদের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সঙ্কুচিত রেখেছিলো। এইসব ক্ষীণকণ্ঠ উদ্বাস্তু রাজ্যহারা মানুষের কাফেলা বিজয়ী সৈন্যদলের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করেছে দুর্গম অঞ্চলে।

বিজয়ীর দর্প কখনও ভাষাকে পবিত্রতা শৃঙ্খল পরায় নি সম্ভবত কিন্তু পরাজিত মানুষেরা নিজেদের ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধতা করেছে ভাষার উপরে পবিত্রতা আরোপ করে। এক ধরণের পবিত্রতা আরোপিত হয়েছে শব্দে, উচ্চারণে, এমন কি যখন উচ্চারণ, শব্দ ধ্বনির চিত্রায়ন চিহ্নায়ন শুরু হলো বিভিন্ন পর্যায়ে এইসব বিষয়েও পবিত্রতা আরোপ করা হয়েছে।

চিহ্ন, শব্দ পবিত্রতা এইসব বিষয় আরও বেশী বৈচিত্র পেয়েছে মানুষের ভাষার ব্যবহার প্রসারিত হওয়ায়। অস্ত্রের জোরে ভাষা দখলের পর ভাষার মৃত্যুর চেয়ে স্বাভাবিক প্রবনতা হলো ভাষার বিবর্তন। দীর্ঘ দিন দীর্ঘ একটি ভৌগলিক পরিসরে বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাসরত মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সুরে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়েছে, সেসব ভাষা ধীরে ধীরে ভিন্ন একটি ভাষায় পরিণত হয়েছে। সব ভাষার ভেতরেই এক ধরণের আঞ্চলিক উচ্চারণ রীতি এভাবেই গড়ে ওঠে। ভাষার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ মুলত ভাষার সন্ধি রক্ষা করে যায়, এরা মধ্যপন্থী মানুষ। এই মধ্যপন্থী মানুষের ভৌগলিক বিস্তৃতি কতটুকু তা নির্ভর করে বসতির দুর্গমতার উপরে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা প্রবল হওয়ায় সেসব জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিঅবিকৃত থেকেছে দীর্ঘদিন। এদের অনেকেই সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছে এমন কি ভাষার চিহ্নায়ন হওয়ার আগেই যদি এরা দুর্গম পরিবেশে আত্মগোপন করে থাকে তাহলে ভাষার চিহ্নায়নের প্রয়োজন তারা অনুভব করে নি। তাদের কথ্য ভাষা থাকলেও তারা ভাষার লিখিত রূপ আবিস্কার করতেই পারে নি অদ্যাবধি।

ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেমন ঘটেছে তেমন ভাবেই বিভিন্ন সময়ে ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে মানুষ। স্থানীয় সংস্কৃতির শক্তি সামর্থ্য নির্ধারণ করেছে এই অব্যহত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রক্রিয়ায় কোনো একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠি কিভাবে প্রভাবিত হবে? বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে এইসব আগ্রাসন প্রতিহত করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে চিন্তাশীল মানুষেরা। যেসব ভাষার লিখিত রূপ বিদ্যমান, বর্তমানের যুগে ভাষিক আগ্রাসনে ভাষা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াটা নেহায়েত বড় মাপের দুর্ঘটনা হিসেবেই পরিচিত হতে পারে।

এই প্রাগৌতিসাহিক চলমান সাংস্কৃতিক-ভাষিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে আমাদের ভাষা আন্দোলন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? আমাদের ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার আগেই ইউরোপে ভাষিক আগ্রাসণ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দার্শণিক লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলো। সে লড়াইয়ে বিজয়ী এবং পরাজিত হওয়ার ইতিহাসও মাধ্যযুগ দেখেছে। তবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক ধরণের অনন্যতা আছে। সাংস্কৃতিক শেকড়, ভাষার পবিত্রতা ইত্যকার হ্যানত্যান যা প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারীর গৎবাধা উচ্চারণ, সেসবের কারণে নয় বরং নেহায়েত অর্থনৈতিক প্রয়োজনে তারা আন্দোলনমুখর হয়েছিলো।

আমাদের ভাষিক আগ্রাসন প্রতিরোধ আমাদের রুটি-রুজির লোভলালসা উদ্ভুত বিক্ষোভ, যেখানে অংশগ্রহন করেছিলো প্রধানত ছাত্রগণ, যারা ভবিষ্যত কেরানীগিরির ক্ষেত্র হিসেবে কিংবা অন্যতম নিয়োগকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ন মনে করেছিলো। রাষ্ট্রই বাঙালী শিক্ষিত যুবকের অন্যতম নিয়োগকর্তা এটা ঔপনিবেশিক সময় থেকেই প্রতিষ্ঠিত। বাঙালী বালক শিশুশিক্ষার পাতা থেকে একটাই মন্ত্র জপে যদি জুটে যায় একটি সরকারী চাকুরি। এই কেরানীগিরির লড়াইয়ে শিক্ষিত ছাত্রসমাজ পিছিয়ে পরবে যদি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রের এই বিমাতাসূলভ মনোভাব বাঙালী শিক্ষিতের পছন্দ হয় নি। তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। চাকুরি নিয়োগ পরীক্ষার বৈষম্য তৈরি করবে এই নীতি এই বলে আন্দোলনে দাবি দাওয়া তুলেছে, এমন কি ২১শে ফেব্রুয়ারী বিকেল ৩টায় মিছিলে গুলিবর্ষিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কেরানীগিরির অধিকার নিয়েই মূলত যাবতীয় মিছিল সমাবেশ। পরবর্তীতে এমন নেহায়েত পেটের আন্দোলনে এক ধরণের বিমূর্ততা নিয়ে এসেছেন সাহিত্যিক সমাজ, তারা একে মহত্ব দিয়েছেন।

আমাদের ভাষার প্রতি মোহটা নেহায়েত অর্থনৈতিক বলেই স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা প্রচলন করতে পারি নি। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ফটাফট ইংরেজী বলতে পারাটা এক ধরণের যোগ্যতা চিহ্নিত হয়েছে। শুদ্ধ বাংলা বলতে লিখতে পারাটা যেহেতু চাকুরি নিয়োগের কোনো শর্ত হয় তাই বাঙালী শিক্ষিত মানুষেরা বাংলা শিখেন নি। তাদের ভেতরে সে বোধও তৈরি হয় নি। কিন্তু ইংরেজী জানাটা এক ধরণের অর্থনৈতিক পরিবরতনের অনুঘটক হয়ে উঠায় মানুষ ইংরেজী শিখেছে আদাজল খেয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে সেটার বিস্ফোরণ ঘটেছে।

যদি বাংলা ভাষা শুদ্ধ করে বলতে ও লিখতে পারার জন্য জনপ্রতি ১০০০ টাকা ধার্য করা হয় তাহলে কোচিং করে, আবৃত্তি কোর্স করে বাঙালী শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা শিখতে ঝাপিয়ে পরবে। আদালতের এত হাঙ্গামা করতে হবে না। ভুল উচ্চারণে বাংলা বললে ১ টাকা হারে জরিমাণা করলেও এই ফল লাভ করা যাবে না। দেখা যাবে যে এই উচ্চারণদারোগা নির্ধারিত হয়েছে সেই ঘুষটুষ নিয়ে বড় দালান হাঁকিয়ে ফেলেছে।

ভাষা ব্যবহারে নানা বৈচিত্র আছে, শব্দ উচ্চারণে আঞ্চলিকতা, ভাষা ব্যবহারের বৈচিত্র এইসব মেনে নিয়েই ব্যকরণবদ্ধ হয় ভাষা। ভাষাকে শৃঙ্খল পরানো নয় ব্যকরণের কাজ ভাষার ভেতরে শৃঙ্খলা উদঘাটন করা, ভাষার সম্ভবনা এবং সীমাবদ্ধতা খতিয়ে দেখবার জন্য একটি ভাষাকে দীর্ঘদিন চর্চিত হতে হয়, সেই ভাষা চর্চার কাজটি করেন সাহিত্যিকেরা। তারা লোকবুলির ভেতর থেকে বিভিন্ন সন্নিবেশনে ভাষার সম্ভবনাগুলো উদঘাটন করেন, এদের ভাষা ব্যবহারকে প্রামাণ্য মেনেই পরবর্তীতে ভাষার ভেতরের শৃঙ্খলা খুঁজে বের করেন ভবিষ্যতে ভাষাবিদগণ।

আমাদের বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো দিক থেকে ঘটা শুরু করেছে, সাহিত্যিক সম্ভবনাধারী প্রাকৃত কিংবা লোকসাহিত্য নিয়ে তেমন যাচাই বাছাই ঘটে নি, রাজদরবারে রাজানুকল্যে গড়ে ওঠা সাহিত্যিক বিষয়াদির রূপ-রস- সাধারণের কণ্ঠে প্রবেশের আগেই এখানে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হয়েছে।

যারা এখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছেন তাদের গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস ছিলো, তাদের অভিজ্ঞতা কিংবা ভাষার ভেতরে শৃঙ্খলা খুঁজবার তাগিদ ছিলো, নেহায়েত ধর্মপ্রচারের দায়ে কিংবা নিজের ধর্ম সম্প্রচারের দায়ে তারা সহজ তরিকায় বাংলা ভাষা/লোকভাষা শিখতে চেয়েছেন।

তারা যাদের গুরু মেনেছেন তাদের সাহিত্যিক সম্ভবনা থাকলেও হয়তো ততটা যোগ্যতা ছিলো না, এমন কি পরমুখে ঝাল খাওয়ার বিষয় এখানে ঘটতে পারে, বাংলা সাহিত্য কিংবা বাংলা ভাষাভাষিদের নিজস্ব প্রয়োজনে বাংলা ব্যকরণ তৈরি হয় নি, বরং ধর্মপ্রচারকদের আগ্রহে এক ধরণের সহজ বাংলা ভাষা পাঠ ব্যকরণ নামে প্রচলিত হয়েছে।

সে কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপনের পর, শাসন এবং শোষণের প্রয়োজন মিটিয়েছে ভাষা, সংস্কৃতের সাথে মৌলিক ব্যবধান থাকলেও সংস্কৃতের শৃঙ্খল বেধেছে এ ভাষাকে, ভাষাও ঔপনিবেশিক প্রয়োজন শোষিৎ হয়েছে, সীমিত জীবনশক্তিতে এরপরো ভাষার বিকাশ ঘটেছে। এক রবিন্দ্রনাথ, এক বঙ্কিমচন্দ্র, এক মধুসুধন, এক বিহারীলাল যেসব সম্ভবনা দেখিয়েছেন, প্রমথ চৌধুরী সংস্কৃত অনুসারী নদীয়া শান্তিপুরী আঞ্চলিক ভাষার সংশোধিত রুপ থেকে বিচ্যুত হয়ে যে ভাষায় লেখা শুরু করলেন সেটা পরবর্তীতে অনুসরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানেও তিনি নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

তারাও চেষ্টা করেছেন বাংলা ব্যকরণ রচনায়, অবশেষে বাংলা একাডেমী সে কাজ সমাপ্ত করেছে, মাত্র তিন বছরের গবেষণায় তারা প্রকাশ করেছেন প্রমিত ভাষার ব্যকরণ, একটি ভাষার ব্যকরণ তৈরি করতে কেউ কেউ অর্ধেক জীবন লাগিয়ে দিলেও বাংলা ব্যকরণ মাত্র তিন বছরে সমাপ্ত করে ফেলা এক ধরণের দক্ষতা কিন্তু আমার অনুমাণ এটাও আদতে সংস্কৃতের আদলে গড়ে ওঠা এক ধরণের ভাষার নিগড়, শিক্ষিত মানুষ ধাতু আর লিঙ্গ নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া ভুলতে পারে নি।