Category Archives: ধ্বনি

ধ্বনিতত্ত্ব

  • ধ্বনি : কোন ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে তার যে পরমাণু বা অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায় তাই ধ্বনি। যেমন – অ, আ, ক, খ।
  • বর্ণ : ধ্বনির চক্ষু গ্রাহ্য লিখিত রূপ বা ধ্বনি -নির্দেশক প্রতীক বা চিহ্নকেই বর্ণ বলে। যেমন – অ, আ, ক, খ।
  • অক্ষর : নি:শ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে একই বক্ষ-স্পন্দনের ফলে যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একবারে একত্রে উচ্চারিত হয় তাকে অক্ষর বলে। যেমন ‘স্পন্দন’ শব্দটিতে ‘স্পন্দন’, ‘অন্’ – এই দুইটি অক্ষর আছে।
  • বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণগুলির সমষ্টিকে-বর্ণমালা বলে।
  • বর্ণ দু’প্রকার। যথা – স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ।
  • স্বরবর্ণ : যে সকল বর্ণ অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় তাকে স্বরবর্ণ বলে। স্বরবর্ণ – ১১ টি।
  • ব্যঞ্জণবর্ণ : যে সকল বর্ণ স্বরের সাহায্যে ব্যক্ত বা উচ্চারিত হয় তাকে ব্যঞ্জণ বর্ণ বলে। ব্যঞ্জণ বর্ণ – ৩৯ টি।
  • স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে- ‘কার’ বলে।
  • ব্যঞ্জণবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে- ‘ফলা’ বলে।
  • বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা-২৫টি
  • বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুইটি বর্ণ রয়েছে-ঐ এবং ঔ।
  • মাত্রা : বাংলা বর্ণ মালার কোন কোন বর্ণের উপরে ‘রেখা’ বা ‘কষি’ দেওয়া হয়। একে বলা হয় মাত্রা।
  • স্বরবর্ণে: পূর্ণমাত্রা বিশিষ্ট বর্ণ ছয়টি। (অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ)
  • স্বরবর্ণে: অর্ধমাত্রা বিশিষ্ট বর্ণ একটি (ঋ)
  • স্বরবর্ণে: মাত্রাহীন বর্ণের সংখ্যা চারটি (এ,ঐ, ও, ঔ)
  • বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাত(৭) টি যেমন: (অ, আ, ই, উ, ঐ, অ্যা, ও)
  • ব্যঞ্জনবর্ণে পূর্ণমাত্রা বিশিষ্ট বর্ণের সংখ্যা ছাবিবশটি (২৬) । যথা: ক ঘ চ ছ জ ঝ ট ঠ ড ঢ ত দ ন ফ ব ভ ম য র ল ষ স হ ড় ঢ় য়।
  • ব্যঞ্জনবর্ণে অর্ধমাত্রা বিশিষ্ট বর্ণের সংখ্যা: সাত (৭) টি। যেমন: খ গ ন থ ধ প শ।
  • ব্যঞ্জনবর্ণে মাত্রহীন বর্ণের সংখ্যা- ছয় (৬) টি। যেমন: ঙ, ঞ, ৎ, ং,ঃ,ঁ।

ধ্বনির উচ্চারণ

ব্যঞ্জন ধ্বনির উচ্চারণ:

 

  অঘোষ ঘোষ          
অল্প প্রাণ মহা

প্রাণ

অল্প প্রাণ মহা প্রাণ নাসিক্য   তাড়নজাত পার্শ্বিক উষ্ম/

শীষ

অন্তস্থ ধ্বনি
কণ্ঠ্য    
তালব্য    
মূর্ধা ড়/ঢ়  
দন্ত্য কম্পনজাত  
ওষ্ঠ্য    

 

  • ক – ম পর্যন্ত ২৫টি ধ্বনিকে স্পর্শ ধ্বনি বলে।
    • য, র, ল, ব অন্ত:স্থ ধ্বনি।
    • হ – ঘোষ মহা প্রাণ ধ্বনি।
    • শ, ষ, স ঘর্ষণজাত ধ্বনি।
    • ং,ঃ,ঁ  = পরাশ্রয়ী বর্ণ।
    • বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা পঁচিশ। বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরজ্ঞাপক দুটো বর্ণ রয়েছে। ঐ এবং ঔ।

q    উচ্চারণ (ব্যঞ্জণ ধ্বনি):

  • ব্যঞ্জন বর্ণ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত, যথা –

(ক) স্পর্শ বর্ণ:  উচ্চারণ স্থানে অর্থাৎ কণ্ঠ, তালু প্রভৃতির সাথে জিহবার কোনো না কোনো অংশের সম্পূর্ণ স্পর্শ বা যোগ হয় বলে এগুলো স্পর্শ বর্ণ। যথা – ক থেকে ম পর্যন্ত।

(খ) অন্ত:স্থ বর্ণ: স্পর্শ বর্ণ ও উষ্ম বর্ণের মধ্যে অবস্থিত বলে এদেরকে অন্ত:স্থ বর্ণ বলা হয়। যথা- য, র, ল, ব।

(গ) উষ্মবর্ণ:      উচ্চারণ উষ্মা অর্থাৎ বায়ু প্রধান ভাবে থাকে বলে এগুলোকে উষ্মবর্ণ বলে। যথা – শ, ষ, স, হ।

  • উচ্চারণ স্থান অনুসারে স্পর্শ পাঁচটি বর্ণের বিভাগ আছে। সে গুলোকে বর্গ বলে। যেমন – ক-বর্গ, চ-বর্গ, ট-বর্গ, ত-বর্গ ও প-বর্গ।
  • স্পষ্ট বর্ণ: ক-বর্গ, ট-বর্গ এবং প-বর্গের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ণগুলোর উচ্চারণকালে, মুখ-বিবরের বিশেষ স্থান স্পষ্ট হয় বলে এগুলো স্পষ্ট বর্ণ।
  • ঘৃষ্ট বর্ণ: চ, ছ, জ, ঝ এদের উচ্চারণকালে জিহবা ও তালুর স্পর্শের পরেই উভয়ের মধ্যে বায়ুর ঘর্ষণজাত ধ্বনি বের হয় বলে এগুলোকে ঘৃষ্ট বর্ণ বলে।
  • অঘোষ বর্ণ: যে সব বর্ণের উচ্চারণ কালে স্থান ও করণের আঘাতজনিত ঘোষ বা শব্দ শ্রুত হয় না, সে গুলোকে অঘোষ বর্ণ বা শ্বাস বর্ণ বলা হয়। যথা- ক খ চ ছ ট ঠ ত থ প ফ শ ষ স।
  • ঘোষ বর্ণ: যে সব বর্ণের উচ্চারণকালে স্থান ও করণের আঘাতজনিত ঘোষ বা শব্দ শুনতে পাওয়া যায় বলে এগুলোকে ঘোষ বর্ণ বলা হয়। যথা- প্রতি বর্গের শেষ তিনটি বর্ণ এবং হ।
  • অল্পপ্রাণ বর্ণ: প্রতি বর্গের প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম বর্গের উচ্চারণকালে এদের সাথে প্রাণ বা শ্বাস বায়ু অল্প নির্গত হয় বলে এগুলোকে অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে।
  • মহাপ্রাণ বর্ণ: বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ এবং উষ্ম বর্ণের উচ্চারণকালে এদের সাথে প্রাণ বা শ্বাস বায়ু অধিক নির্গত হয় বলে এগুলোকে মহাপ্রাণ বর্ণ বলে।
  • অর্ধস্বর/তরলস্বর: ‘য’, ‘র’, ‘ল’, ‘ব’ – এদের বিশুদ্ধ উচ্চারণ স্বর ও ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যবর্তী। এরা খাঁটি ব্যঞ্জনবর্ণ নয় এবং খাঁটি স্বরবর্ণও নয়। এজন্য য ও ব -কে অর্ধস্বর এবং র ও ল-কে তরলস্বর বা অর্ধব্যঞ্জন বলে।
  • কম্পনজাত বর্ণ: ‘র’- জিহবার অগ্রভাগ কম্পিত করে এ বর্ণ উচ্চারণ হয় বলে একে কম্পনজাত বর্ণ বলে।
  • পার্শ্বিক বর্ণ: ‘ল’-এর উচ্চারণকালে জিহবার দু’ পাশ দিয়ে বায়ু বের হয় বলে একে পার্শ্বিক বর্ণ বলে।
  • শিশ বর্ণ: শ, ষ, স- তিনটি শুদ্ধ উষ্ম বর্ণ উচ্চারণকালে শিশ দেওয়ার মত শব্দ হয় বলে এগুলোকে শিশ বর্ণ বলা হয়।
  • তাড়নজাত বর্ণ: ‘ড়’, ‘ঢ়’ – জিহবার নিম্নভাগ দিয়ে দন্তমূলে তাড়না করে এদের উচ্চারণ করতে হয় বলে এদেরকে তাড়নজাত বর্ণ বা তড়িত ব্যঞ্জনবর্ণ বলে।