Author Archives: Khan Mohammad Mahmud Hasan

অধিবর্ষ

সাধারণভাবে পৃথিবীতে সৌর বৎসর গণনা করা ৩৬৫ পার্থিব দিনে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সূর্যকে আবর্তন করতে পৃথিবীর মোট সময় লাগে ৩৬৫.২৪২ পার্থিব দিন। সাধারণভাবে এই সময় গণনা করা হয় ৩৬৫.২৫ পার্থিব দিন। এই অতিরিক্ত সময় (.২৫ সৌরদিন) চার বৎসর পর ১ পার্থিব দিনের সমান হয়। চার বৎসরে পাওয়া এই বাড়তি ১ দিন বৎসরে সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। ফলে ওই বৎসরে পার্থিব দিনের সংখ্য দাঁড়ায় ৩৬৬ পার্থিব দিন। এই বাড়তি দিন যুক্ত করে ৩৬৬ দিনে যে বৎসর গণনা করা হয়, তাকে বলা হয় অধিবর্ষ।

যে সমস্ত বৎসরকে ৪ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, সে সকল বৎসরে
 সাথে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত খ্রিষ্টাব্দের সাথে এই বাড়তি দিন যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল খ্রিষ্ট-পূর্ব ৪৫ অব্দে (জুলিয়ান পঞ্জিকা চালু হওয়ার সময়)। সাধারণ বৎসরগুলোতে ফেব্রুয়ারি মাস গণনা করা হয় ২৮ দিনে। কিন্তু অধিবর্ষে ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে।

১৫৪২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকা প্রবর্তিত হলে- অধিবর্ষের নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। যেহেতু ৩৬৫.২৪২ পার্থিব দিনের বৎসরকে ৩৬৫.২৫ পার্থিব দিন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রতি বৎসরই হিসাবে কিছুটা বাড়তি থেকে যায়। এই কারণে প্রতি শতাব্দীতে একটি দিন বাদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে সকল বৎসরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল থাকে না, সে সকল বৎসরের ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন গণনা করা হয়। অর্থাৎ ওই বৎসরকে অধিবর্ষ বলা হয় না।

শুধু পরীক্ষার ফলাফল নয়, চাকরির বাজারে চাই বাড়তি যোগ্যতা

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই আপনার চাকরির জন্য যথেষ্ট নয়! অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো কমতি নেই, অথচ হস্তগত শিক্ষার অভাবে তারা চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হস্তগত শিক্ষা কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, যোগ্য চাকরিজীবীর অভাবে তাদের অনেক সময়ই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

 

চাকরির নানা ধরনের ক্ষেত্র থাকলেও তার সবই যে আপনার জানা রয়েছে, এমনটি নয়। আবার হয়তো ক্ষেত্রটি সম্পর্কে আপনি জানেন, কিন্তু কখনও ভেবে দেখেননি যে এই খাতে আপনার চাকরির জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে। এমনই একটি ক্ষেত্র হলো বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে চলা বিদেশি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো। এই খাতের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে যেগুলো সম্পর্কে আপনি আসলে আগে থেকেই জানেন। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা না ভেবে থাকলে ভাবতে পারেন এখনই! ইত্তেফাকের ক্যারিয়ারে আজ এই বিষয়ে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ টিপস।

 

চোখ কান খোলা রাখুন :প্রথমেই খোঁজ নিয়ে দেখুন, বাংলাদেশে এমন মাল্টিন্যাশনাল বা বিদেশি কোন কোন কোম্পানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে এর একটি তালিকা তৈরি করুন। এরপর এই তালিকা থেকে আপনি সুনির্দিষ্ট কোনো এক বা একাধিক কোম্পানির বিষয়ে আগ্রহী হলে সেই কোম্পানি বা সংস্থাগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। তারপর এক এক করে সেই সংস্থা বা অফিসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর করুন। এভাবেই শুরু হোক আপনার নতুন পথচলা।

 

যোগ্যতার বেড়িবাঁধ :আপনি যেহেতু চাকরিপ্রার্থী, তাই ধরে নেওয়া যায় আপনি যোগ্যই। কেননা, সাধারণত এসব সংস্থা বা অফিসগুলোতে চাকরি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে আপনার বাস্তবমুখী কাজের যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশি। সুতরাং ভড়কে যাবেন না। আবার অনেকে হয়তো এজন্য খুশিই হচ্ছেন। কারণ যেখানে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সনদপত্র ছাড়া তেমন কিছুই করে না। তবে বাড়তি যোগ্যতা স্বরূপ আপনাকে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা থাকতে হবে আপনার। অনলাইন জগত্ মানে শুধু ফেসবুক দুনিয়া নয়, এই বাস্তবতা আপনাকে জানতে হবে এবং অনলাইন দুনিয়ার খোঁজখবর সম্পর্কেও জানা আবশ্যক।

 

আবেদনের কানুন :সবকিছু বিবেচনা করে যদি নিজেকে যোগ্য মনে করেন তবে আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে অনলাইনে সজাগ থাকতে হবে। কারণ, এই সংস্থাগুলোতে চাকরির আবেদন অনলাইনে গ্রহণ করা হয়। যদি চাকরির পদ খালি থাকে তবে সেখানেই বিস্তারিত জানতে পারবেন, কী কী যোগ্যতা লাগবে এবং কেমন করেই বা সেখানে আবেদন করবেন—সেই মোতাবেক আবেদন করুন। যথাসময়ে ডাক পড়বে আপনার।

 

পরীক্ষা-ভাইভা :এসব প্রতিষ্ঠানেও কিন্তু আপনাকে পরীক্ষা এবং ভাইভার মুখোমুখি হতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠানে আবার সরাসরি প্র্যাকটিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনি যদি এসব ক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারেন, তাহলেই আপনাকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

 

চাকরি যেমন :চাকরিগুলো তুলনামূলক উপভোগ্য। কাজের ক্ষেত্র খুবই চমত্কার। অফিসের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। সাধারণত এসব অফিসে আপনি দোভাষী, প্রজেক্ট ম্যানেজার, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, ফিল্ড সুপার, অফিস এক্সিকিউটিভ পদের জন্য কাজ করতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও অফিসগুলো তাদের নিজেদের দেশের মান বিবেচনায় অন্যান্য পদের জন্যও চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে।

 

বেতন ভাতা :যদি সনদপত্রের পাশাপাশি হাতের কাজের দক্ষতা থাকে তাহলে বেতন নিয়ে আপনাকে খুব ভাবতে হবে না। যদি বড় সংস্থাগুলো হয়, তাহলে আপনার চাহিদার তুলনায় খারাপ কিছু নিশ্চয়ই হবে না।

 

খোঁজ রাখুন :বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হলেও আপনি এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করতে পারবেন। বিশেষ করে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ অফিস, সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো সংস্থাগুলোতে। এ ছাড়াও রুম টু রিড, ইউনিসেফ, সুন্দরবন, পরিবেশ, মানবতা ইত্যাদি সম্পর্কিত অনেক সংস্থা বাংলাদেশে বড় অফিস নিয়ে কাজ করছে। এসব সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক, প্রজেক্টভিত্তিক অনেক চাকরির সুযোগ আছে। একটু খোঁজখবর রাখলেই ভালো পদে চাকরি পেতে পারেন।

 

তাই মাল্টিন্যাশনাল বা বিদেশি কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর খোঁজে লেগে পড়ুন আজই। সেই সাথে বাড়াতে থাকুন নিজের যোগ্যতার খাত।

এমবিবিএস এর পর যা যা করতে পারেন

অনেকেই এমবিবিএস এর পরে দেশে/দেশের বাইরে ক্যারিয়ার করার ব্যাপারে জানতে চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। সবার জন্য কমন উত্তর হিসেবে লিখছি। উল্লেখ্য তথ্যগুলো বিভিন্ন গ্রুপ এবং সিনিয়র ডাক্তারদের পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

এমবিবিএস করার পরঃ

১)বাংলাদেশে যা যা করতে পারেনঃ

#চাকরিঃ

সরকারি বিসিএস (২ বছর বাধ্যতামূলক গ্রামে থাকতে হবে), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিকেল কোর (ক্যাপ্টেন হিসেবে পদায়ন),

#বেসরকারি চাকরিঃ ট্রেনিংসহ- কিছু বেসরকারি হাসপাতালে (BIRDEM, UNITED, Holy Family etc) মেডিকেল অফিসার হিসেবে চাকরি করে নির্দিষ্ট সময় মেয়াদী পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং কাউন্ট করিয়ে নেয়া যায়, সাথে বেতন আছে, বিনাবেতনে অনারারী/অনাহারী ট্রেনিং।

#ট্রেনিং ছাড়াঃ ইনডোর/আউটডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল/ক্লিনিকে চাকরি/খ্যাপ, লেকচারার হিসেবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চাকরি।

#রিসার্চ ভিত্তিক চাকরিঃ ICDDRB, BRAC, other NGOs, (পাবলিক হেলথ এ ক্যারিয়ার করতে চাইলে এদিকে যাওয়া যেতে পারে)

#অন্যান্যঃ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে চাকরি, ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান যেমন গার্মেন্টস/স্কুলে ডাক্তার হিসেবে চাকরি, কোচিং, টিউশনি, ব্যবসা ইত্যাদি!

২)একাডেমিক ডিগ্রিঃ

FCPS

MCPS

MD/MS(Residency and Non-residency)

Diploma (offered by BSMMU: Diploma in Gyane & Obs., Cardiology, Ophthalmology, Child health Anesthesiology, DDV, Forensic Medicine, Dermatology, Pathology, Microbiology, ENT, DCP, DLO, DTCD, Diploma in Orthopaedic Surgery & General Surgery, DMU)

MPH/Public Health

MTM

M.Phil (Anatomy, Physiology, Biochemistry, Pharmacology Microbiology, Radiology & Imaging, Community Medicine, PSM, Immunology and Nuclear Medicine)

M.Med (Medical Education)

PhD

MBA (!)

Bio-medical Engineering

৩) দেশের বাইরেঃ

#লাইসেন্সিং এক্সামিনেশন (রেসিডেন্সি প্রোগামে পড়াশুনা, চাকরি, জিপি প্রাকটিস, সনোগ্রাফি)ঃ

*English Speaking Country:

USMLE(USA)

PLAB(UK)

AMC(Australia)

MCCEE,MCCQE(Canada)

PRES(Ireland)

NZREX(Newzealand)

Singapore (MRCP/MRCS করে লাইসেন্সিং পরীক্ষা দেয়া যাবে)

Malaysia (বাংলাদেশের শুধু ৪টা মেডিকেল কলেজ DMC, MMC, CMC, SOMC এর ডাক্তাররা সরাসরি পরীক্ষা দিতে পারবে অন্যরা MRCP/MRCS করে পরীক্ষা দিতে পারবে)

ARDMS (USA) (For Medical Diagonostic Sonographer, DMU করে দেয়া যাবে, ১ বছর এর ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স লাগবে, সুপারভাইজার এর রেকমেন্ডেশন লেটার লাগবে)

CARDUP (CANADA) (For Medical Diagonostic Sonographer, DMU করে দেয়া যাবে, ১ বছর এর ক্লিনিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স লাগবে, সুপারভাইজার এর রেকমেন্ডেশন লেটার লাগবে)

*Non-English Speaking Country:

Europe: ভাষা শিখতে হবে

Middle-east: সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইরাক ইত্যাদি (লাইসেন্সিং পরীক্ষা দিতে হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে নিচ্ছে না)(শুধু মাত্র চাকরির জন্য, বেতন ভালো, ওখানে বসে MRCP/MRCS দেয়া যায়)

Maldives: (১ বছর মেয়াদী চুক্তি, শুধু চাকরি, বর্তমানে লোক নিচ্ছে, বেতন মোটামুটি ভাল, ওখানে বসে USMLE/AMC/PLAB/MRCP প্রিপারেশন নেয়া যায়)

অন্যান্যঃ (জানা নাই, গুগল করেন!)

#রয়েল কলেজ মেম্বারশিপ/ফেলোশিপ পরীক্ষাঃ

(UK/Ireland)

MRCP(UK)

MRCPI

MRCS(Intercollegiate)

DOHNS-MRCS(ENT)

MRCOG

MRCGP

MRCPCH

MRCPsych

MCEMMFPH(Part A & Part B/OSPHE.) (Public health) (http://www.fph.org.uk/exams)

FRCR

FRCA

FRCPath

FRCS

FRCOphth

FRCP

বাংলাদেশ থেকে যেসব বিদেশী পরীক্ষা দেয়া যায়ঃ

USMLE(step1,step 2CK)

PLAB(part 1)

MRCP UK(part 1,part 2 written)(London,Edinburgh,Glasgow)

MRCS(part A,England & Glasgow)(part B OSCE,England)

MRCOG(part 1,part 2 written)

MRCGP

#রিসার্চ সেক্টরঃ

MSc,MPH,MHA & PhD in USA,Canada

রিকয়ারমেন্ট- GRE, IELTS/TOEFL (কানাডার ক্ষেত্রে অনেক ইউনিভার্সিটিতে এগুলো কিছুই লাগেনা)

Journal: প্রকাশিত জার্নালে নাম অথবা কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে ভাল

MSc,MPH & PhD in UK,Australia

রিকয়ারমেন্ট-IELTS

Scholorships: Erasmas Mundus, DAAD ইত্যাদি অনেক ধরনের স্কলারশিপ বিশেষ করে কানাডা এবং ইউরোপে আছে।

ইন জেনারেল হালকা পাতলা ধারনা এখান থেকেই পাওয়া যাবে। এখান থেকে পথ সিলেক্ট করে (আমি নিজেই আরো বেশি কনফিউজড হয়ে গেছি এত অপশন দেখে!) সে অনুযায়ী স্পেসিফিক প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন, যা জানি উত্তর দেবার চেষ্টা করব এবং অন্যরা আশা করি সাহায্য করবেন।

Dr. Marufur Rahman Opu

পোস্ট গ্রাজুয়েশনঃ বিষয়টি যখন চোখ

লেখকঃ ডাঃ যাকিয়া সুলতানা নীলা
এম বি বি এস (ডিএমসি;কে ৫৯), এম এস চক্ষু(৩য় পর্ব, থিসিস)
এফসিপিএস(কোর্স), ২৮ তম বিসিএস

চোখ যে মনের কথা বলে কিন্তু মেডিকেল সাইন্সে চোখ মন আর রোগ সবকিছুর কথা বলে। হোক সে ডায়বেটিস অথবা হাইপারটেনশন অথবা ক্রনিক লিভার ডিজিজ চোখ সিগনাল দেবেই । চোখের ভাষা জানতে তাই অনেকে হতে চান চক্ষু বিশেষজ্ঞ ।

প্রথমেই বলব আনন্দের কথা । Ophthalmology  একটি বহু মাত্রিক বিষয় ।এখানে চেম্বার এবং সার্জারি সব দিকেই সমান সুযোগ আছে ।যে কেউ ফিজিশিয়ান আর সার্জন উভয় ক্যরিয়ার এনজয় করতে পারবে ।এই দেশে গাইনি আর পেডিয়েট্রিক্স এর পর সব চাইতে বেশী কর্ম সংস্থানের সু্যোগ এখানে । সরকারী আর বেসরকারী  উভয় সেক্টরেই প্রচুর কাজ করার সুযোগ আছে । ঢাকার বাইরে এমনকি প্রত্যন্ত মফস্বলেও আছে কাজের ক্ষেত্র । এখন চোখের সুপার স্পেশালিটি অনেক গুলি ঃ    Retina, Neuro- Ophthalmology, Glaucoma, Cataract, Cornea, Oculoplasty and Community Ophthalmology . এই প্রত্যেক শাখায় রয়েছে উন্নত ক্যারিয়ারের সুযোগ। আমাদের দেশের চক্ষু চিকিৎসা এত উন্নত  ও সুলভ যে এখানে  চিকিৎসা যোগ্য অন্ধত্তের হার দ্রুত কমে যাচ্ছে । আমাদের সিনিয়র বিশেষজ্ঞ গন তাদের সেবা আর শ্রমের মাধ্যমে এই দেশের চক্ষু চিকিৎসা সেবায় বিপ্লব আনতে সক্ষম হয়েছেন।

অনেকের ধারণা এটা খুব আরামের বিষয়  ইমারজেন্সি কোন কাজ নাই । এটা হল ভুল ধারণা । ঢাকায় আই ইন্সটিটিউট থাকায় ডিএমসি আর মিটফোর্ড এ চাপ একটু কম। একটু কম মানে কিন্তু ইমারজেন্সি না থাকা নয়। এই দুই মেডিকেল এর সিএ রাও রাত ৮ টার আগে বাসায় যেতে পারে না । আই ইন্সটিটিউটে আর ঢাকার বাইরে যে কোন মেডিকেল এ ২৪ ঘন্টা ইমারজেন্সি থাকে । এখানকার ইমারজেন্সি গুলিতেও তাৎক্ষণিক সেবা দিতে হবে এবং সেই সেবা শ্রম সাধ্য । তাই আরামের ইচ্ছা থাকলে এখানে না আসাই ভালো ।

এই বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে হলে প্রচুর ধৈর্য আর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে । কারন পড়তে হবে এমন অনেক বই যার নাম কেউ এমবিবিএস লাইফে শোনে নাই । এগুলো পড়া অনেক কষ্ট সাধ্য  ও সময় সাপেক্ষ । এই দেশে সরকার স্বীকৃত পাঁচটি ডিগ্রী করা যায় এই বিষয়ে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী হল ডিপ্লোমা, এমএস ও পিএইচডি । বিসিপিএস এর ডিগ্রী হল এমসিপিএস ও এফসিপিএস ।

ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর সুযোগ পাওয়া যাবে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দেওয়ার ।      পেপার ওয়ানের বই হল   : Ocular Anatomy and Physiology (Khorana) , Neuro Anatomy (Snell), Ocular Anatomy (Snell), Head-Neck part and Brain-Eyeball Part (Dutta),Ocular Anatomy (Wolf), Pharmacology (Vision)

পেপার টু এর বই হল : Ocular Anatomy and Physiology (Khorana) ,Nervous System , Cardio-vascular System, Respiratory System , Endocrine System , Electrolyte-Body fluid , Acid Base Balance, Metabolism ( Ganong, Vision), Biostatistics ( মোজাম্মেল স্যারের বই : ABC)

পেপার থ্রি এর বই হল : Clinical Ophthalmology (Kanski), Basic Pathology (Robbins),Microbiology (Lange,Khaleque), Ocular pathology (Greer’s)

Ocular Anatomy and Physiology (Khorana), Clinical Ophthalmology (Kanski) এই দুই বই পড়তে পড়তে মোটামুটি দাঁত সব ভেঙ্গে যাবে । কারণ এই বই দুইটি একেবারেই অজানা থাকে এমবিবিএস লাইফে । পাসের হার আতংক জনক ভাবে কম । কি আমার কথা ভুল মনে হচ্ছে ?? এই জানুয়ারি( জানুয়ারি,২০১৪) তে ২০+ পাস করেছে এটা খুব রেয়ার । কারণ সচরাচর ৩/৪ জন পাস করে ; এমনকি এমন ও টার্ম আছে যখন একজন ও পাস করে নাই । গত ১০/১২ বছর ধরে  এমনি চলছে । বিসিপিএস এর চারটি বিষয়ে পাস করা খুব কঠিন ঃ Anaesthesia , Ophthalmology, ENT, Radiology . এই পর্যন্ত বিসিপিএস এর ইতিহাসে এই বিষয়ে যতজন পার্ট ওয়ান পাস করেছে তাদের মধ্যে হাতে গোনা ৫/৬ জন প্রথম বার মানে ইন্টার্নশিপ শেষ করার দুই মাসের মধ্যে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান পাস করেছে । এখানে ৬ থেকে ১৮ মাসের প্রিপারেশন লাগে । তাই অনেকেই এই সময় প্রিপারেশন নিয়ে এই সময় পার করেই প্রথমবার পরীক্ষা দেয়।। সংগী বন্ধুরা অন্যান্য বিষয়ে পাস করে যখন হাওয়া খেয়ে বেড়াবে তখনও হয়ত তোমাকে বই নিয়ে বসে থাকতে হবে । তাই এই মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। হতাশ হলে চলবে না পথ যত বন্ধুর তা পেরুনোর আনন্দ তত বেশী । আমি বলবো এই বিষয় এ পার্ট ওয়ান করতে হলে কোচিং এর কোন প্রয়োজন নাই । কারন তা কোন কাজে আসবে না । বিসিপিএস এ বেসিক ক্লাস করলে তা বেশী উপকারে আসবে । আসলে এত সময় লাগার কথা ছিল না যদি আমরা Kanski  টাও এমবিবিএস লাইফে পড়তাম । তাহলে আর এই বই নতুন মনে হত না । আমাদের স্যার গণ ফিফথ ইয়ারে এই বই পড়তে বললেও তখন আমরা শুনিনাই । গুরুর কথা না শুনলে মাসুল দিতেই হবে । যারা এমবিবিএস এখনো শেষ কর নাই কিন্তু ভবিষ্যতে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হতে চাও তারা একটু একটু করে Kanskiযদি পড়তে পারো তাহলে পরবর্তীতে দেখবে প্রথম বারই পাস হয়ে যাবে ।  ছয় মাসে প্রতিদিনে একপাতা বেশী পড়া তোমার জীবনের একটি বছর বাঁচিয়ে দেবে ।পার্ট ওয়ানের পর তিন বছর ট্রেইনিং এর পর এক বছর কোর্স এর পর পার্ট টু । ১০ বারের মধ্যে তা পাস করতে হবে ।

এমসিপিএস ডিগ্রীর জন্য ইন্টার্নশিপ শেষ হবার পর তিন বছর পার হতে হবে আর Ophthalmology  ট্রেনিং থাকতে হবে এক বছর । পড়তে হবে পুরো এফসিপিএস ২য় পর্বের মত । তাই এই বিষয়ে এখন নাই বা বললাম ।

ডিপ্লোমা আর এমএস এর জন্য ভর্তি  পরীক্ষা দিতে হবে ইন্টার্নশিপ শেষ হবার এক বছর পর ।ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন স্বাভাবিক , সার্জারির অন্যান্য বিষয়ের মত ।

ডিপ্লোমা সহজ মনে হলেও ভর্তি হয়ে তা পাস করার জন্য এফসিপিএস ২য় পর্বের প্রস্তুতি থাকতে হবে । এখন ডিপ্লোমা তে OSPE , রিটেন , ভাইভা সব দিতে হয় কমপ্লিট করতে । তাই এখানেও প্রচুর শ্রম দিতে হবে ।

এমএস দুই ধরণের রেসিডেন্সি এবং নন রেসিডেন্সি । রেসিডেন্সি তে পার্ট এ দুই বছরের এবং পার্ট বি তিন বছরের । নন রেসিডেন্সিতে ভর্তি হবার পর ৬ মাস পার্ট ওয়ান কোর্সের পর পরীক্ষা ঃ পেপার ওয়ানে এনাটমি + ফার্মাকোলজি , পেপার টুতে ফিজিওলজি + বায়োকেমিস্ট্রি , পেপার থ্রি তে প্যাথলজি + মাইক্রোবায়োলজি । রিটেন এর জন্য এমবিবিএস এর সব বই আর এফসিপিএস পার্ট ওয়ানের বই গুলি লাগবে । হার্ড পার্ট এ স্কাল লাগবে , সফট পার্ট এ ভিসেরা তে ব্রেইন , লাংস, হার্ট , লিভার, কিডনি এই গুলি লাগবে । এনাটমি তে হিস্টোলজির স্লাইড আর প্যাথোলজির স্লাইড থাকবে । দুই বছর ট্রেনিং এর পর পার্ট টুতে ৬ মাসের কোর্স । পার্ট টু- তে দুই পেপার ঃ পেপার ওয়ানে রিটেন – Principle of surgery  (Bailey and Love), ভাইভা – Bailey and Love, Makhonlal, S das, Bhattachariya, RCS (long case + Short case) সব লাগবে । পরীক্ষার স্টাইল হুবহু ফাইনাল প্রফের জেনারেল সার্জারির মত হবে লং কেস, শর্ট কেস ,টেবিল ভাইভা( কোন কার্ড প্রশ্ন ছাড়া)। প্রশ্নের মান হবে অনেক কঠিন ; অন্যান্য সার্জারির  ডিসিপ্লিন এর মত প্রশ্ন হবে । Ophthalmology  রিলেটেড কোন প্রশ্ন হবে না । পেপার টু তে থাকবে Biostatistics, Genetics, Immunology and Clinical এই চার টি বিষয়  । এই পড়ার বহর দেখে নিশ্চয়ই পাসের হার কত কম তা বোঝা যাচ্ছে । কিন্তু ইচ্ছা আর শ্রম দিয়ে সব জয় করা যায় । তবে সব কিছুর জন্য ৮ টার্ম ( প্রতি পার্টের জন্য ৮)।  এর পর দুই বছর মেয়াদি থিসিস পর্ব ।

এই বেসিক পোস্ট গ্রেজুয়েশন শেষ করার পর পিএইচডি আর Super specialty তে ফেলোশিপ করা যাবে ।

ট্রেনিং করা যাবে কমপক্ষে সহকারী অধ্যাপক আছেন এমন যে কোন সরকারী মেডিকেল এ , এছাড়া BSMMU, NIO,BIRDEM, ISLAMIA, Lion’s, CHITTAGONG EYE INFERMARY তে।

এইবার ক্যারিয়ার এর বিষয় । এখানে ক্যারিয়ার একটু ব্যয় সাধ্য বটে । বিশেষজ্ঞ হবার পর একটি কাজ করার মত চেম্বার সাজাতে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ এখানে । ভালো একটি স্লিটল্যাম্প, একটি অটো রিফ্র্যাক্টোমিটার, টনোমিটার আর অন্যান্য টুকিটাকি মিলিয়ে এই খরচ হবেই । এই গুলি ছাড়া ত চেম্বার হবে না । টর্চ লাইট দিয়ে ত চেম্বার হয় না । ভালো স্লিট ল্যাম্প এর দাম ই ১০/১২ লাখ টাকা ।  আর যদি ওটির কিছু যন্ত্রপাতি কেনার টারগেট থাকে তাহলে আরো কয়েক গুন বেশী খরচ হতে পারে । তাই এই বিষয়েও প্রস্ততি নিতে হবে ।

আবারো বলছি এই দেশে গাইনি আর পেডিয়েট্রিক্স এর পর সব চাইতে বেশী কর্ম সংস্থানের সু্যোগ এখানে । তাই যারা চাও চক্ষু বিশেষজ্ঞ হতে সময় নষ্ট না করে ঝাঁপিয়ে পড় বই নিয়ে লাইব্রেরীতে ।

অপথালমজিতে ক্যারিয়ার

লেখকঃ Medicolegal Bappy

অপথালমজিতে ক্যারিয়ার   প্ল্যাটফর্ম Platform

নিরিবিলি পরিবেশে চুপচাপ একা একা কাজ করার জন্য বেছে নিতে পারেন অপথ্যালমোলজি ।এমারজেন্সীভাবে এখানে তেমন কিছু নেই যাতে আপনাকে দিনের পর দিন রাতে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়। মেয়েরাও অপথ্যালমোজি কে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখতে পারেন নিঃসন্দেহ। রাজশাহী মেডিকেলের অপতথ্যালমোলজি বিভাগীয় প্রধান ডাঃ তানজিলা ম্যাডাম তেমন ই একজন সফল মানুষ। মজার বিষয় হলো এখানে আপনার ৮০ভাগ সার্জারির অজ্ঞান করার জন্য কোন এনেস্থেটিস্ট দরকার নেই, আপনি নিজেই যথেষ্ট।

অপথ্যালমোলজি এম এস এর প্রিপারেশন asusual সার্জারির মতো। কিন্তু FCPS টা একটু। ব্যাতিক্রমি এখানকার স্পেশাল কিছু পড়াশোনা করতে হয় সেক্ষত্রে পড়াশোনার আগে অপথ্যালমোলজিতে ট্রেনিং করে নিলে ভালো হয়এতে ক্লিনিক্যাল প্রশ্নগুলোর
উত্তর করা সহজ হয় ।

নিচের বইগুলো পড়লে কিছু সুবিধা পাওয়া যেতে পারেঃ
ফিজিওলজি ও এনাটমী র জন্য ,
JOHN FERRIS
MCQ ,
ক্লিনিক্যাল এনাটমী ফিজিওলজি ও প্যাথলজি KANSKI,
এনাটমী ও ফিজিওলজি তে A K KHORANA
এছাড়া Roddy র স্পেশাল সেন্স এর পড়া তো থাকছেই । তো এগিয়ে যাও।

ডাক্তারদের পড়ালেখা, প্রেক্ষাপট: যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া

লেখকঃ ডাক্তার আব্দুল্লাহ সাইদ খান

ডাক্তারদের পড়ালেখা, প্রেক্ষাপট: যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া   প্ল্যাটফর্ম Platform

আপনি কি জানেন- যুক্তরাস্ট্রে এমবিবিএস বলে কোন ডিগ্রী নেই? যুক্তরাজ্যে জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে আপনাকে ৫ বছরের স্নাতকত্তোর ট্রেইনিং শেষ করতে হবে? কানাডায় মেডিকেল স্টাডিস-এ প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করতে হবে-  এই তথ্য কি আপনার জানা ছিল?

আমাদের মাঝে পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়াশোনা নিয়ে কৌতুহল থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কখনও ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়নি। তাই ভাবলাম, বিষয়টি একটু পড়ি। পড়ে অনেক কিছুই জানা হল। চলুন দেখি, পাশ্চাত্যের ডাক্তারি পড়ালেখার ধরণ কেমন-

এই প্রবন্ধে মূলত যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল এডুকেশন নিয়ে আলোচনা থাকবে। সাথে, বাংলাদেশ থেকে যে চিকিৎসকরা এসব দেশে যেতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের পথপরিক্রমা সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। আমাদের দেশের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে যারা দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী, তারা সাধারাণত এই ইংলিশ স্পিকিং দেশগুলোতেই যাওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসাবিদ্যা যেহেতু মানুষের সাথে সম্পর্কিত সেহেতু বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা তাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেডিকেলে এডুকেশনকে সাজানোর চেষ্টা করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশভেদে মেডিকেলে পড়াশোনার নিয়মের কিছুটা পার্থক্য আছে।

যুক্তরাস্ট্র

যুক্তরাস্ট্রে মেডিকেল আণ্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম চার বছরের। এটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল দ্বারা পরিচালিত হয়। এ প্রোগ্রামে ঢোকার শর্ত হল- অন্য যে কোন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। তবে, একজন মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্রকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হলে উক্ত বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করাকালীন এসোসিয়েশন অব অ্যামেরিকান মেডিকেল কলেজেস কতৃক নির্ধারিত কিছু কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে আছে- রসায়ন দুই বছর (যার এক বছর জৈব রসায়ন), এক বছরের জীববিজ্ঞান এবং এক বছরের ফিজিক্স। রসায়ন ও জীববিজ্ঞান কোর্সে সেলুলার বায়োলজী, ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি এবং জেনেটিক্স রাখার উপদেশ দেয়া হয়। এছাড়া স্কুল ভেদে সুনির্দিষ্ট ‘বিষয়ের’ শর্তাবলীর পার্থক্য আছে।

একজন ছাত্র এই প্রি-মেডিকেল শর্তাবলী পূরণ করলে মেডিকেল কলেজ এডমিশন টেস্ট (এম,সি,এ,টি) দিতে পারে। মেডিকেল স্কুলে চান্স পাওয়া নির্ভর করে ছাত্রের প্রি-মেডিকেল কোর্সের একাডেমিক রেকর্ড, এম,সি,এ,টি-র ফলাফল, অন্যান্য প্রি-মেডিকেল এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটি(যা ছাত্রের মেডিসিন-এর প্রতি আগ্রহকে স্পষ্ট করে), বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার এবং ইন্টারভিউ-এর ফলাফল ইত্যাদির উপর।

মেডিকেল স্কুল থেকে যে ডিগ্রী দেয়া হয় তার নাম ডক্টর অব মেডিসিন (এম,ডি) অথবা ডক্টর অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন (ডি,ও)। মেডিকেল স্টাডিকে স্কুলভেদে  চার থেকে পাঁচ বছরের পড়াশোনায় ভাগ করা হয়। প্রথম দু’বছর বেসিক সায়েন্স এবং পরের তিন বছর ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ। প্রথম দুই থেকে তিন বছর যে বিষয়গুলো কাভার করতে হয় সেগুলো হল- এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, হিস্টোলজি, এমব্রায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথোলজি, প্যাথোফিজিওলজি, নিউরোসায়েন্স ইত্যাদি। তবে, কারিকুলাম আমাদের দেশের মত সাবজেক্টভিত্তিক সাজানো হয় না বরং সিস্টেম ভিত্তিক (যেমন: ব্রেইন এণ্ড বিহেভিওর, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম প্রভৃতি)সাজানো হয়। ফলে, একজন ছাত্রের প্রথম থেকেই রোগী ও রোগ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ হয়। এগুলো পড়া শেষ হলে একজন ছাত্র ইউনাইটেড স্টেটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সাম তথা ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান দিতে পারে। এরপর কোন একটি টিচিং হসপিটালে তিন বছরের ক্লার্কশিপে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় মেডিসিন, সার্জারী, পেডিয়াট্রিক্স, ফ্যামিলি মেডিসিন, গাইনোকোলজি ও অবস্টেট্রিক্স, নিউরোলজি এবং সাইকিয়েট্রি ওয়ার্ডে রোটেশন হয়। এর পাশাপাশি কিছু ইলেকটিভ সাব-স্পেশালিটিতেও ক্লার্কশিপ সম্পন্ন করতে হয়। (কোনো কোনো স্কুল জয়েন্ট পোগ্রাম পরিচালনা করে, যেখানে মেডিকেল সায়েন্সের পাশাপাশি রিলেটেড বিষয়ে পিএইচডি, মাস্টার্স ইত্যাদি করার সুযোগ থাকে) পড়াশোনার চতুর্থ বছরের শেষে মেডিকেল ছাত্ররা সাধারণত ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পরীক্ষা দেয়।

ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ শেষে একজন ছাত্র এম,ডি বা ডি,ও ডিগ্রী অর্জন করেন, কিন্তু প্র্যাকটিস করতে পারেন না। প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স পেতে হলে তাকে কমপক্ষে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ এবং নির্দিষ্ট স্পেশালিটিতে (তথা বিষয়ে) রেসিডেন্সি শেষ করে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি তথা লাইসেন্সিং পরীক্ষা দিতে হয়। এরপরই কেবল একজন প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন।(প্রসঙ্গত, যুক্তরাস্ট্রের অল্প কিছু প্রদেশে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ শেষে মেডিসিন প্র্যাকটিস করার সুযোগ আছে।)

রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রামের উপর। এটি একটি কম্পিউটার চালিত প্রোগ্রাম যেখানে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পাশ করা ডাক্তারদের রেসিডেন্সিতে ঢুকার আবেদন ও টিচিং হাসপাতালের বিভিন্ন স্পেশালিটিতে শূণ্য রেসিডেন্সি পদের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে ডাক্তারদের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। যেহেতু রেসিডেন্সি পদ কম এবং আবেদন অনেক বেশী থাকে, ফলে এই ম্যাচিং প্রোগ্রামটি অনেক শক্ত হয়। অনেক আবেদনকারীকেই তাদের ইচ্ছেকৃত স্পেশালিটিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার, অনেককে তাদের ইচ্ছে পরিবর্তন করতে হয়। রেসিডেন্সির ম্যাচিং-এর সময় যে প্রভাবকগুলো কাজ করে তা হল: আবেদনকারী ক্রমানুসারে যে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে ইচ্ছুক তার লিস্ট, আবেদনকারীর ইউ,এস,এম,এল,ই পরীক্ষার নম্বর, আলফা-ওমেগা-আলফা (সংক্ষেপে এ,ও,এ) মেম্বারশিপ, ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপের গ্রেড, রিকমেণ্ডেশন লেটার, ক্লাসে মেধাক্রম, রিসার্চের অভিজ্ঞতা, কোন স্কুল থেকে এম,ডি পাশ করেছে, আলাদা কোন যোগ্যতা (যেমন রিলেটেড বিষয়ে মাস্টার্স করা থাকলে তা) ইত্যাদি।

বিষয়ভেদে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর ডিউরেশন তিন বছর থেকে শুরু করে দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সংক্ষেপে বললে, ইন্টারনাল মেডিসিন-এ তিন বছর এবং জেনারেল সার্জারীতে পাঁচ বছর ট্রেইনিং করতে হয়। কেউ যদি মেডিসিনের সাবস্পেশালিটি এবং সার্জারীর সাবস্পেশালিটিতে ডিগ্রী করতে চান, তার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ বছর ফেলোশিপ টেইনিং করতে হয়। ট্রেইনিং শেষে একজন ডাক্তার তার স্পেশালিটিতে বোর্ড সার্টিফিকেশন-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এরপর তাকে উক্ত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।(একে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি-ও বলা যায়) পরীক্ষা পাশ করলে উক্ত স্পেশালিটির বোর্ড সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।

যারা জেনারেল ফিজিশিয়ান হতে চান তারা কি করবেন? প্রদেশভেদে এই বিষয়টিতে পার্থক্য আছে। কোন কোন প্রদেশে একবছর ইন্টার্ণশিপ ট্রেইনিং-এর পর প্র্যাকটিস-এর সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।  তবে অধিকাংশ প্রদেশেই এখন জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগে তিন বছর রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাস্ট্রে জেনারেল প্র্যাকটিশনার শব্দটি উঠে গেছে। তার পরিবর্তে এদেরকে বলা হচ্ছে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।

যে সকল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট যুক্তরাস্ট্রে স্যাটল হতে চান, তাদেরকে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টু(সি,কে ও সি,এস) পাশ করে রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। সে হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে যে সকল মেডিকেলে স্টুডেন্ট যুক্তরাস্ট্রে যেতে আগ্রহী তাদেরকেও একই পথে চলতে হবে। পার্ট ওয়ান পরীক্ষা মেডিকেলের চতুর্থ বছর শেষেই দেয়ার সুযোগ আছে। পার্ট ওয়ান এবং টু সি,কে দু’টো পরীক্ষাই বাংলাদেশে আমেরিকান এম্বেসিতে দেয়া যায়। পার্ট টু সি,এস যুক্তরাস্ট্রে গিয়ে দিতে হয়। পার্ট টু সি,এস পাশ করার পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করার পর শুরু হয় ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম-এ নাম আসার জন্য অপেক্ষা করার পালা। নাম আসলে পড়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়। এরপরই একজন ক্যানডিডেট রেসিডেন্সিতে ঢুকতে পারে। রেসিডেন্সিতে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ছাত্রদের ই,ইউ,এস,এম,এলই-তে অনেক ভাল করা (অর্থাৎ প্রায় ৯৯ পারসেন্টাইলে থাকা) জরুরী । নইলে সাধারণত রেসিডেন্সি পাওয়া যায় না। কারণ, এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রাম। তবে পরীক্ষার রেজাল্ট পারসেন্টাইলের দিকে দিয়ে সামান্য কম হলেও, যদি যুক্তরাস্ট্রের সিটিজেনশিপ থাকে(অথবা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয়) অথবা কোন সিটিজেন তাকে স্পন্সর করে(তথা অভিভাবক হওয়ার দায়িত্ব নেয়), তাহলে রেসিডেন্সি ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রসঙ্গত, রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা সাধারণত ৮০ ঘন্টা বা তার বেশী। প্রত্যেক সপ্তাহে টানা ছত্রিশ ঘন্টার একটা ডিউটি থাকবেই। বছরে তিন সপ্তাহের একটি ভ্যাকেশন বাদে পার্সনাল ছুটি ছয় দিন পর্যন্ত নেয়া যায় (ইন্সটিটিউশন ভেদে পার্থক্য থাকতে পারে)। প্রতিষ্ঠানভেদে বাৎসরিক স্যালারী ন্যূনতম ৪০০০০ ডলার থেকে শুরু। প্রতি বছর পর স্যালারী কিছুটা বাড়ে।

এশিয়ান ডাক্তাররা শুধু এশিয়ান রুগীদের চিকিৎসা দিতে পারে।

কানাডা

কানাডার মেডিকেল এডুকেশন প্রায় যুক্তরাস্ট্রের মেডিকেল এডুকেশন সিস্টেমের মত। কানাডার লাইসেন্সিং পরীক্ষার নাম মেডিকেল কাউন্সিল অব কানাডা কোয়ালিফাইং এক্সামিনেশন (এম,সি,সি,কিউ,ই)। পার্ট দু’টো। ইউ,এস,এম,এল,ই-র মত দ্বিতীয় পার্টের ক্লিনিকাল নলেজ(সি,কে) অংশটি নেই। কানাডাতেও মেডিকেল স্কুলে ঢোকার শর্ত হল একটি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম চার বছরের। প্রথম দুই বছর প্রি-ক্লিনিকাল এবং পরের দুই বছর ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপ। প্রি-ক্লিনিকাল শেষে পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতে হয়। ক্লার্কশিপ শেষে এক বছর ইন্টার্ণশিপ করার পর পার্ট টু পরীক্ষা দেয়া যায়। পার্ট টু পাশ করলে ডক্টর অব মেডিসিন (কানাডায় ডি,ও নেই) সার্টিফিকেশন দেয়া হয়। কিন্তু প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে যুক্তরাস্ট্রের মতই রেসিডেন্সি ট্রেইনিং শেষে বোর্ড সার্টিফিকেশন এক্সাম দিতে হয়। এমনকি ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হতে হলেও দুই বছরের উক্ত বিভাগে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। অন্যান্য বিষয়ে রেসিডেন্সির সময়সীমা বিষয়ভেদে যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন ভার্সিটির মতই।

একজন ছাত্র ইচ্ছে করলে রেসিডেন্সি প্লাস পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে, তাকে কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হয় (যেমন: রিসার্চ-এ অংশগ্রহন করার অভিজ্ঞতা)।

কানাডার ডাক্তারদের ৫ বছর পর পর রিসার্টিফিকেশন করতে হয়। এটি পরিচালিত হয় মেইনটেনেন্স অব সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম দ্বারা, যা কন্টিনিউইং মেডিকেল এডুকেশন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত। রিসার্টিফিকেশনের জন্য একজন ফিজিশিয়ানের কার্যাবলী আপডেট রাখতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। (উল্লেখ্য, এই প্রবন্ধে উল্লিখিত সবগুলো দেশেই এই নিয়ম বিভিন্ন মাত্রায় চালু আছে।)

যুক্তরাস্ট্র বাদে অন্যান্য দেশের ডাক্তারদের কানাডায় চিকিৎসক হতে হলে প্রথম শর্ত হল, কানাডার সিটিজেনশিপ থাকা বা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়া বা ওয়ার্ল্ড হেল্দ অর্গানাইজেশন রেফুজি হিসেবে কানাডায় থাকা। দ্বিতীয় শর্ত হল, যে দেশ থেকে মেডিকেল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছে সে দেশে প্র্রাইমারী ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ হওয়া অথবা সেটা না হলে আইইএলটিএস-এর চারটি ধাপের প্রত্যেকটিতে স্কোর কমপক্ষে ৭ থাকা। এই শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মেডিকেল গ্রাজুয়েট এম,সি,সি,ই,ই (তথা মেডিকেলে কলেজ অব কানাডা ইভ্যালুয়েটিং এক্সাম) পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে। পরীক্ষাটির সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে, বাংলাদেশে কানাডা এমবেসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার সেন্টারও বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরীক্ষায় পাশ করলে ন্যাশনাল এসেসমেন্ট কোলেবোরেশন অবজেক্টিভ স্ট্রাকচারড ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন (সংক্ষেপে এন,এ,সি-ও,এস,সি,ই)পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষাটি ইন্টারন্যাশনাল গ্রাজুয়েটদের এসেস করার জন্যই আয়োজন করা হয়। এই পরীক্ষাটি দিতে হয় কানাডায়।

এরপর আসে রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এর পালা। রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এ আবেদন করার আগে ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট প্রোগ্রাম-এ অংশ নিলে, ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে। এই প্রোগ্রামে একজন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট (আইএমজি)-কে হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের তত্বাবধানে আট সপ্তাহের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় এবং তার কাজের উপর স্কোরিং করা হয়। অত:পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। রেসিডেন্সি ম্যাচ হলেই কেবল রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ প্রবেশ করা যায়।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের ডিগ্রী মূলত এম,বি,বি,এস । তবে ইনস্টিটিউট ভেদে এই ডিগ্রী বিভিন্ন নাম ধারণ করতে পারে, যেমন: এম,বি,সিএইচ,এস; এম,বি,বি,সিএইচ ইত্যাদি । এম,বি,বি,এস পাঁচ বছরের কোর্স। তবে কোন কোন মেডিকেল স্কুল এখন চার বছরের এম,ডি ডিগ্রীও দিয়ে থাকে। মান এবং কারিকুলাম একই। তবে চার বছরের কোর্সে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশী। আমেরিকা-কানাডার মত মেডিকেলে ভর্তির জন্য গ্র্যাজুয়েশন থাকা জরুরী নয়। বরং, হাইয়ার সেকেণ্ডারী এডুকেশন পার করার পর পরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা (ইউনাইটেড কিংডম ক্লিনিক্যাল এপটিচুড টেস্ট অথবা বায়োমেডিকেল এডমিশন টেস্ট)দেয়া যায়। এম,বি,বি,এস-এর পাঁচ বছর সময়কালকে আগে প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল এই দু’ভাগে ভাগ করা হত। প্রি-ক্লিনিক্যাল ছিলো পুরোপুরি লেকচারভিত্তিক এবং সাবজেক্টভিত্তিক(অর্থাৎ এনাটমি, ফিজিওলজি.. এভাবে)। ক্লিনিক্যাল-এর সময় ছাত্রদের লেকচারভিত্তিক এবং রোগীভিত্তিক শিক্ষা দেয়া হতো। তবে, এখন প্রায় প্রতিটি স্কুলে এই পদ্ধতি পরিবর্তন করে, শরীরের বিভিন্ন তন্ত্র(সিস্টেম)-ভিত্তিক কারিকুলাম সেট করা হচ্ছে এবং সেই সাথে ‘প্রবলেম বেজড লার্নিং’ পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন ভার্সিটিতে পাঁচ বছর সময়কালকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। কোন স্কুলে এক-তিন-এক বছর, কোন স্কুলে দুই-দুই-এক বছর ইত্যাদি।

এম,বি,বি,এস শেষ করার পর একজন ছাত্রকে দুই বছর মেয়াদী ‘ফাউণ্ডেশন ইয়ার’-এ প্রবেশ করতে হয়। এক বছর ইন্টার্ণশিপ (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার এক বলে) এবং এক বছর রেসিডেন্সি (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার দুই বলে)। রেসিডেন্সি শেষ করার পর একজন যদি জেনারেল প্র্যাকটিশনার(জি,পি)হতে চায়, তাকে জেনারেল প্র্যাকটিস-এ আরও তিন বছরের পোস্টগ্রাজুয়েশন ট্রেইনিং নিতে হয়। আর যারা অন্য কোন স্পেশালিটিতে যাবে তাদের বিষয়ভেদে কমপক্ষে পাঁচ বছরের মত অতিরিক্ত ট্রেইনিং নিতে হয়। ট্রেইনিং প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্ট নিরিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। ট্রেইনিং শেষে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে গন্য হয় এবং তারপরেই কেবল স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার জন্য সার্টিফিকেট পেতে পারে।

ইউরোপিয়ান ওয়ার্কিং টাইম ডাইরেকটিভ (ই,ডাব্লিউ,টি,ডি) ইউরোপে একজন জুনিয়র ডাক্তারের কর্মঘন্টা নির্ধারণ করে দিয়েছে সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা। কিন্তু এটি নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের আপত্তি আছে। পূর্বে জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল (জি,এম,সি) কর্তৃক নির্ধারিত ওয়ার্কিং আওয়ার ছিল ৫৬ ঘন্টা, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ইণ্টার্ণদের ডিউটি আওয়ার সপ্তাহে ১০০ ঘন্টাও ছাড়িয়ে যেত। ই,ডাব্লিউ,টি,ডি নির্ধারণের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মঘন্টা কমিয়ে ৪৮ ঘন্টা করা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স পেতে হলে প্রথম ধাপ হল- প্রফেসনাল এণ্ড লিঙ্গুইস্টিক এসেসমেন্ট বোর্ড (সংক্ষেপে পি,এল,এ,বি বা প্ল্যাব) পরীক্ষা দিতে হবে। প্ল্যাব পরীক্ষার প্রথম পত্র বাংলাদেশ থেকে দেয়া যায় এবং দ্বিতীয় পত্রটি (প্র্যাকটিকেল এসেসমেন্ট)ইংল্যাণ্ডে গিয়ে দিতে হয়।

প্ল্যাব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ট্রেইনিং-এর জন্য আবেদন করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ম্যাচিং প্রোগ্রাম জাতীয় কোন প্রক্রিয়া নেই। স্বাভাবিক ভাবেই অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া সহজ হয় (যেমন: যুক্তরাজ্যের পরিচিত ডাক্তার থেকে রিকমেণ্ডেশেন লেটার)।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল ডিগ্রী প্রধানত এম,বি,বি,এস। তবে, কোন কোন মেডিকেল স্কুল এম,ডি ডিগ্রীও দেয়। স্কুল ভেদে মেয়াদকাল চার থেকে ছয় বছর। মেডিকেল স্কুলে চান্স পেতে হলে দুটো পথ আছে। কলেজ (অর্থাৎ সেকেণ্ডারী স্কুল) পেরিয়ে ঢুকতে হলে আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (ইউ,জি,এম,টি) এবং গ্রাজুয়েট হয়ে ঢুকতে গ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (জি,এম,এ,টি) দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম যুক্তরাজ্যের মতই। তবে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সুবিধে হল অন্যান্য দেশের মত জেনারেল প্র্যাকটিশনার হতে হলে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং জরুরী নয়। বরং এক বছর ইন্টার্ণশিপ শেষে স্বাধীনভাবে জেনারেল প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি স্পেশালিটিতে ক্যারিয়ার করতে আগ্রহী হয়, তাকে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর জন্য এপ্লাই করতে হবে। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যের মত এখানেও কোন রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম নেই।  

বাংলাদেশের তরুণ ডাক্তারদের মধ্য থেকে যারা অস্ট্রেলিয়া যেতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমেই এ,এম,সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে।(উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় রেজিস্ট্রেশন পেতে কয়েকটি পাথওয়ে আছে। তন্মধ্যে, বাংলাদেশী তরুণ ডাক্তারদের জন্য কেবল স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়ে প্রযোজ্য। এজন্য এখানে স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়েটাই সংক্ষেপে বলা হল।)  এ,এম,সি তথা অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল দু’টো ভাগে পরীক্ষাটি নেয়। প্রথমটি মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন যার নাম সি,এ,টি এম,সি,কিউ এক্সামিনেশন। এটি পাশ করলে পরের পার্টটি দুই ভাবে দেয়া যায়- ‘এ,এম,সি ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন’ অথবা ‘ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট’। প্রথম পার্টের সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে (কোলকাতায় নেই)। দ্বিতীয় পার্ট অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েই দিতে হয়। যারা ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন দিবেন তাদের পরীক্ষা এক দিনে সম্পন্ন হয়। আর, যারা ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট-এ অংশ নেবেন তাদেরকে এএমসি পার্ট ওয়ান পাশ করার পর মেডিকেল বোর্ড অব অস্ট্রেলিয়া থেকে লিমিটেড রেজিস্ট্রেসন অর্জন করতে হবে। এরপর নিজ দায়িত্বে (অর্থাৎ সিভি সাবমিট করে, সরাসরি যোগাযোগ করে বা অন্য কোন উপায়ে) অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অনুমোদিত কোন হাসপাতালে জব নিতে পারলে, কাউন্সিল বরাবর এপ্লিকেশন করে ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্টের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। 

এএমসি পাশ করার পর টিচিং হাসপাতালে ইণ্টার্ণশিপের জন্য আবেদন করতে হবে। লক্ষ্যনীয় যে, বাইরের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইণ্টার্ণশিপের পজিশন আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে, পজিশনের জন্য প্রতিযোগীতা বেড়ে গেছে। ইণ্টার্ণশিপ শেষ হলে প্র্যাকটিস-এর লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে হয়ে। কিন্তু, লাইসেন্স পাওয়ার অন্যতম আরেকটি শর্ত হল- পারমানেন্ট রেসিডেন্সি থাকা। অস্ট্রেলিয়ার স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার লিস্টে চিকিৎসক না থাকায়, রেসিডেন্সির পাওয়ার একমাত্র উপায় হল ইন্টার্ণশিপ শেষে আবেদন করা। লক্ষ্যনীয়, রেসিডেন্সির আবেদনের ক্ষেত্রে ভিসার রকমভেদে অতিরিক্ত শর্তাবলী আছে। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বিয়ে করার চেয়ে সহজ কোন উপায় এ পথে নেই।

নিউজিল্যাণ্ডে আই,এম,জি-দের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অস্ট্রেলিয়ার মতই।

পরিশেষে

এ লেখার মধ্য দিয়ে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল পড়াশোনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে জানতে পারলাম। তবে বেশ কিছু জিনিস এই আর্টিকেলে ওঠে আসেনি,  যেমন: মেডিকেল স্কুলে পড়ার বিশাল খরচ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের প্রয়োজনীয় ধাপগুলোতে খরচ, ভিসা নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। তারপরও, প্রবন্ধটি পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়ালেখা সম্পর্কে অনেকের কৌতুহল কিছুটা হলেও মেটাতে পারবে বলে আশা রাখছি।   

লেখাটি তৈরী করতে যে ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে:

১. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_States

২. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_Canada

৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_Kingdom

৪. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_Australia

৫. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_States

৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_Kingdom

৭. http://en.wikipedia.org/wiki/Residency_(medicine)

৮. http://www.usmle.org/

৯. http://imgbc.med.ubc.ca/path-to-residency/

১০. http://www.gmc-uk.org/

১১. http://www.amc.org.au/

১২. http://people.howstuffworks.com/becoming-a-doctor12.htm)

১৩. http://www.telegraph.co.uk/health/healthnews/10741905/EU-rules-on-doctors-working-hours-puts-patients-at-risk-report-finds.html

পড়ার অনেক সুযোগ তো নিজ মহাদেশেই

বিদেশে পড়তে যেতে চান, বাংলাদেশের এমন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ ইউরোপ, আমেরিকা। ‘খরচ, শিক্ষার মান, খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ’_এসব বিষয় বিবেচনা করলে আপনি চাইলেই তো নিজ উপমহাদেশকেই বেছে নিতে পারেন। এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আছে পড়াশোনার অনেক সুযোগ। জাপান, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতসহ অনেক দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিকমানের। ইউরোপ-আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো খুব বেশি ভিসা জটিলতা নেই এসব দেশে। পড়ার খরচও তুলনামূলক কম।

আইইএলটিএস ছাড়াই ভর্তি
জাপান, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা মাধ্যমের কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে কোর্সভেদে আইইএলটিএস স্কোর থাকতে হবে ৫.০ থেকে ৬.০। আইইএলটিএস ছাড়াও আবেদনের সুযোগ আছে এসব দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সে ক্ষেত্রে সে দেশে যাওয়ার পর ইংরেজি ভাষার ওপর ফাউন্ডেশন কোর্স করতে হবে। মালয়েশিয়া, ভারত ও থাইল্যান্ডে আইইএলটিএস ছাড়াই ভর্তি হওয়া যাবে। তবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়াটাই ভালো। ইংরেজিতে দক্ষ হলে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেমন সহায়ক হয়, তেমনি খণ্ডকালীন কাজ পাওয়াটাও সহজ হয়।

ভর্তি তথ্য অনলাইনে
স্টুডেন্ট ভিসা, আবেদন প্রক্রিয়া ও পড়াশোনার প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাবেন অনলাইনে। চীনে উচ্চশিক্ষার তথ্য পেতে সহায়ক হবে এই সাইট দুটি_www.study-in-china.org ‰es http://www.educhinalink.cn। হংকংয়ে পড়াশোনার তথ্য পাবেন ‘স্টাডি ইন হংকং’-এর ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত এই ওয়েব পোর্টালে_http://studyinhongkong.edu.hk/eng/। আরো কিছু দরকারি সাইটের ঠিকানাও পাবেন সাইটটিতে। জাপানে পড়াশোনার তথ্য পাবেন http://www.bd.emb-japan.go.jp/en/education/index.html লিংকে।
মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন http://www.studymalaysia.com সাইটটি। দেশটির ইমিগ্রেশন (www.imi.gov.my) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (www.moe.gov.my) সাইটেও আছে স্টুডেন্ট ভিসা ও পড়াশোনার দরকারি তথ্য। সিঙ্গাপুরের শিক্ষাব্যবস্থা ও পড়াশোনার তথ্যের বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.moe.gov.sg)| studyinthailand.org_এই সাইটে পাবেন থাইল্যান্ডে ভর্তি, ভিসাসহ শিক্ষাবিষয়ক অনেক তথ্য। ভারতে পড়তে যেতে চাইলে ভিজিট করতে পারেন দেশটির সরকারি ওয়েব পোর্টাল_www.india.gov.in/overseas/study_india/studyinindia.php।

ভর্তি প্রক্রিয়া ও আবেদন
সাধারণত ভর্তি সেশন শুরুর দু-তিন মাস আগে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় অফার লেটার পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শাখা। লেটার পাওয়ার পরপরই ভিসা আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাসে। প্রসঙ্গত, ভর্তি ও ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফটোকপি, সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, আর্থিক সামর্থ্যের কাগজপত্র, আইইএলটিএস সনদ (প্রযোজ্য হলে) এবং সদ্য তোলা পাসপোর্ট আকারের ছবি দরকার হবে।

আছে বৃত্তি নিয়েও পড়ার সুযোগ
এশিয়ার কয়েকটি দেশের সরকার ও সংস্থা প্রতিবছরই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.moedu.gov.bd) চোখ রাখলেই পাওয়া যাবে এসব তথ্য। এ ছাড়া চীনের বিভিন্ন বৃত্তির তথ্য পেতে চোখ রাখুন এই ওয়েবে_www.moe.edu.cn/edoas/e। সিঙ্গাপুরের বৃত্তির আগাম খোঁজ পেতে রেজিস্ট্রেশন করুন এই ওয়েব লিংকে_https://moe.wufoo.com/forms/notification-for-scholarship-registrations/। জাপানের ‘এশিয়ান ইয়ুথ ফেলোশিপ’-এর বৃত্তি আবেদনের তথ্য পাবেন http://www.asiaseed.com সাইটটিতে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

সকল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
– ভিসার জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র (বড় হাতের অক্ষরে পূরণ করতে হবে)
– সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি
– পাসপোর্ট (ন্যূনতম ছয়মাস মেয়াদ থাকতে হবে)
– বৈধ পাসপোর্টের প্রথম পাঁচ পাতার ফটোকপি (বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্টে আবেদন করাই ভালো/ইপিএস ভিসার ক্ষেত্রে এমআরপি বাধ্যতামূলক)
– কনস্যুলার বরাবর আবেদনপত্র
– ব্যাংক স্টেটমেন্ট (ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট সহ)
– এয়ার টিকেট বুকিং স্লিপ
বি দ্রঃ সকল বাংলা কাগজপত্রের ইংরেজী অনুবাদ জমা দিতে হবে।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আরো যা লাগবেঃ
– ১৫ মাসের মেয়াদ সহ পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের প্রথম পাঁচ পাতার ফটোকপি
– সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি (এই ছবি আবেদন ফরমের নির্ধারিত জায়গায় লাগাতে হবে)
– ভিসার জন্য আবেদনকারীর নিজ হাতে লেখা আবেদন পত্র
– ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ভর্তির সার্টিফিকেট (মূল কপি ও ফটোকপি)
– আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি ও ফটোকপি
– আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন (বার্থ সার্টিফিকেট) এর মূল কপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরিত সত্যায়িত ফটোকপি
বি দ্রঃ অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এইটা নিয়ে।সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টারে কোন বার্থ সার্টিফিকেট জমা নেয়না। এইজন্য আগে থেকেই অন্যকোন ভাবে কাউন্টার পাস নিয়ে ভিতরে গিয়ে সত্যায়িত করতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাথে নোটারী কপি সাথে নিয়ে যাবেন।
– সিটি কর্পোরেশন (সমমান) থেকে দেয়া ফ্যামিলি রিলেশন সার্টিফিকেট
– একাডেমিক ও অন্যান্য খরচ বহন করা হবে এই মর্মে কোন সার্টিফিকেট (সাধারণত স্কলারশীপ দাতা প্রতিষ্টান বা প্রফেসররা এইটা দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন স্কলারশীপ হলে কতৃপক্ষ ভর্তির সার্টিফিকেটের সাথেই এই সার্টিফিকেট পাঠিয়ে থাকে।অন্যথায় একাডেমিক ও থাকা খাওয়ার খরচ বহনের জন্য আবেদনকারীর নিজের অথবা তার অভিভাবকের অর্থনৈতিক সামর্থের প্রমানপত্র দিতে হবে)
– মাতাপিতার সম্মতিপত্র (সাধারণত ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে)
– মাতাপিতার বাংলাদেশী পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের ফটোকপি
– পুলিশ ভেরিফিকেশন যা অবশ্যই স্বরাষ্ট্র অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে (এটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে খুব সহজেই সত্যায়িত করা যায়)
– শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদের মূলকপি ও ফটোকপির নোটারী করাতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে (এটি প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত কপি নিয়ে আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে)
বি দ্রঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার আগে সকল সার্টিফিকেট সংশিষ্ট বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাউন্টারে (সচিবালয়ের ৯ নং কাউন্টার) সকালে জমা দিলে বিকেলে পাওয়া যায়। কিন্তু বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যায়িত করার জন্য সময় লাগবে।
বিজনেস ভিসার জন্য আরো যা লাগবেঃ
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর বিজনেস রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (কোরিয়ার ট্যাক্স অফিস থেকে ইস্যু করা হয়)
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর আমন্ত্রণপত্র ও কোরিয়া থাকা অবস্থায় সকল সাপোর্ট দিবে এমন একটি সার্টিফিকেট
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক (এলসি, আমদানী চুক্তি ইত্যাদি-যদি থাকে)
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর অফিশিয়াল প্যাডে ভিসা রিকোয়েস্টিং লেটার
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর কর্পোরেট সার্টিফিকেট অথবা ট্রেড লাইসেন্স সার্টিফিকেট
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট
– আমন্ত্রণকৃত কোম্পানীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও যিনি আবেদন করবেন তার ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটম্যান্ট (সর্বশেষ ৬ মাস)
ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আরো যা লাগবেঃ
– ভিসা রিকোয়েস্টিং লেটার
– কোরিয়ার ভ্রমণ পরিকল্পনা
– বিমান টিকেটের বুকিং স্লিপ
– হোটেল বুকিং স্লিপ/ যেখানে থাকবেন তার ঠিকানা এবং ওখানে যে থাকবেন তার প্রমাণপত্র
– ব্যক্তিগত অথবা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সর্বশেষ ছয় মাস)
– আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক সনদপত্র অথবা ট্রেড লাইসেন্স (যদি থাকে)
– আবেদনকারীর ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
– আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠান থেকে কাজে নিয়োগের ইপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট
– আমন্ত্রণপত্র এবং কোরিয়ায় সাপোর্ট সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
ইপিএস ভিসাঃ
ইপিএস ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বোয়েসেল সরবরাহ করবে এবং বোয়েসেল পুরো বিষয়টি তদারকি করে। সেক্ষেত্রে ইপিএস ভিসার আবেদনকারীগণ বোয়েসেলের নির্দেশনা মেনে চললেই হবে।
কোরিয়ান দূতাবাসের সময়সূচিঃ
কর্মদিবসঃ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার
আবেদনপত্র গ্রহণঃ ৯টা-সাড়ে ১২টা
ডেলিভারি প্রদানঃ ৯টা-সাড়ে ১২টা এবং ২টা-৫টা
সাধারণত সাত দিনেই ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হয়। তবে বিভিন্ন কারণে দেরিও হতে পারে। ভিসা সেকশন থেকে ডেলিভারী নেওয়ার জন্য ফোন করা হয়।
ভিসা ফিঃ সিংগেল (৯০ দিন পর্যন্ত) – ৩০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা
সিংগেল (৯০ দিনের বেশি) – ৫০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা
মাল্টিপল – ৮০ ডলারের সমপরিমাণ টাকা
কোরিয়ান দূতাবাসে ফোন/ইমেইল করে জেনে নিতে পারেন বিস্তারিতঃ
ঠিকানাঃ
বাসা নং ৪, মাদানী এভিনিউ, বারিধারা, ঢাকা। (আমেরিকান দূতাবাসের উত্তর পশ্চিম কোণে)
ফোন : (০২)৮৮১২০৮৮-৯০
ফ্যাক্স : (০২)৮৮২৩৮৭১
ইমেইলঃ embdhaka@mofat.go.kr
consuldhaka@mofat.go.kr (ভিসা সেকশন )
ওয়েবসাইটঃ http://bgd.mofat.go.kr/english/as/bgd/main/index.jsp

আমেরিকা( USA ) H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা

আমাদের তরুণ সমাজের বেশিরভাগেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে সুন্দর ও সফল এক জীবন গড়ে তোলার। এজন্য জমিজমা বিক্রি করতেও অনেকে পিছপা হয় না। আর কিছু সুযোগসন্ধানী আছে যারা তারুণ্যের এই স্বপ্নকে পূঁজি করে গড়ে তুলেছে টাকা কামানোর বড় বড় প্রতিষ্ঠান। এদের কেউ বা বিদেশের শ্রমবাজারে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে, আর কেউ ছাত্র হিসাবে বিদেশে পাঠানোর মুলো ঝুলিয়ে ভাল কামাই করে নিচ্ছে ছাত্রদের কাছ থেকে। এদের খপ্পরে পরে বিদেশে যাওয়ার আগেই অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে। অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে বিদেশে যাওয়ার পরে। মাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রে খবর পাই যে দালালের খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেক বাংলাদেশী। বিদেশে ছাত্র পাঠানোর এজন্টগুলোর বেশিরভাগও এমন এমন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পাঠায় যেগুলো তৈরিই হয়েছে এসব ব্যবসা করার জন্য। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই কোন বৈধ অনুমোদন নেই, এবং এদের দেয়া ডিগ্রীও অচল টাকার মতোই অকেজো।
বেশিরভাগ তরুণই এসব সুযোগসন্ধানীর পাল্লায় গিয়ে পড়ছে মূলতঃ বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা না থাকায়। তাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশের জীবনকে যেভাবে মনে চায় নিজের মতো করে আরও স্বপ্নীল ও আকর্ষনীয় করে তাদের সামনে তুলে ধরছে এইসব দালালেরা। তাদের কথা শুনলে মনে হবে কোথাও কোন সমস্যা নেই। একবার কোনমতে বিদেশে গিয়ে পৌছাতে পারলেই সব মুশকিল আসান। বিদেশের জীবনের তুলনায় দালালকে দেয়া টাকা তখন বেশ কমই মনে হয়। অতএব যা হাতে আছে, এবং যা নেই তা ম্যানেজ করে হলেও দালালের হাতে খুশিমনে তুলে দেই বিদেশে যাবার জন্য। অথচ বিদেশে চাকরী বা পড়ালেখার ভাল দিকগুলোর পাশাপাশি সমস্যাগুলো সম্পর্কেও যদি আগে থেকে ধারণা থাকতো, এবং ঠিক কি কি বিষয়ে প্রশ্ন করে বিস্তারিত তথ্য নিতে হবে তা জানা থাকতো, তখন ভুয়া দালালেরা আর সহজে ফাঁদে ফেলতে পারতো না এদের।
সম্প্রতি আমার পরিচিত এক ছোটভাই জানালো ইদানীং বাংলাদেশের কোন এক প্রতিষ্ঠান H1B ভিসায় (প্রফেসনাল ওয়ার্ক পারমিট) যুক্তরাষ্ট্রে লোক পাঠানোর উপর ভাল প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে H1B ভিসা পেতে গেলে প্রথমে বায়োডাটা (CV) দিয়ে তা যাঁচাই করার জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হবে। বায়োডাটা দেখে তারা যদি বলে যে সে H1B-এর জন্য যোগ্য, তখন ওয়ার্ক অর্ডার প্রসেস করার জন্য ফি দিতে হবে ৫০০ ডলার। আর ভিসা হয়ে গেলে সার্ভিস চার্জ হিসাবে ঐ প্রতিষ্ঠানকে আরও ৬.৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের দেশের অনেকেরই H1B ভিসা সম্পর্কে ভাল কোন ধারণা নেই। তাই প্রফেসনাল চাকুরী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার এই ব্যবস্থাকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় মনে হতে পারে। তবে বাস্তবে H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রসেস করার জন্য প্রার্থীকে কোন ফি দিতে হয় না। যে কোম্পানী চাকুরীর প্রস্তাব দিচ্ছে, এটা তাদেরই করার কথা। আমি নিজে H1B ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি ৬ বছর হলো। H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা প্রসেসিং-এর পাশাপাশি এর ভাল-মন্দ দুই দিক সম্পর্কেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর তার আলোকেই আজ এ নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম, যেন কোন দালালের খপ্পরে পড়ার আগে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পায় পাঠক।

H1B কি?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসনাল বিভিন্ন খাতে দক্ষ লোকের অভাব পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর অন্যান্য দেশের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রফেসনাল লোককে H1B ক্যাটাগরীতে যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরীর অনুমোদন ও ভিসা দিয়ে থাকে। ২০১২ অর্থবছরে সাধারণ কোটায় ৬৫০০০ ও উচ্চতর ডিগ্রীধারীর (যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমানের শিক্ষা) কোটায় আরও ২০০০০ আবেদনকারীকে H1B-র অনুমোদন দেয়া হবে। আবেদন গ্রহণ করা শুরু হয় প্রতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে। ২০১২ সালের দুই কোটায় ইতিমধ্যেই ৪৩৩০০ ও ১৯৬০০ লোককে অনুমোদন দেয়া হয়ে গেছে। (সর্বশেষ অবস্থা জানতে এখানে ক্লিক করুন)। অর্থাৎ দুই কোটায় ২০১২ সালের এপ্রিলের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে আর সর্বোচ্চ ২১৭০০ ও ৪০০ লোক নেয়া হবে। কোন কোন চাকুরীক্ষেত্রে H1B ভিসা দেয়া হয় তা জানার জন্যে এখানে ক্লিক করতে পারেনঃ
http://www.h1base.com/content/h1boccupations
কি যোগ্যতা প্রয়োজন?
যে পেশায় চাকুরীর জন্য H1B-এর আবেদন করা হবে, প্রার্থীকে তার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ে ন্যূনতম যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ব্যাচেলর ডিগ্রীর সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। অর্থাৎ, কম্পিউটারের কোন চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কম্পিউটার সায়েন্স বা আই টি-র উপর যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হতে হবে। এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।

H1B প্রসেসিং
H1B-এর পুরো প্রক্রিয়া মোটামুটিভাবে বলা যায় দুই পর্যায়ে বিভক্তঃ H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা। প্রথম অংশ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পুরোটাই চাকুরীদাতা কোম্পানীর, এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের দায়িত্ব প্রার্থীর।
H1B ওয়ার্ক পারমিট
প্রথমে চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্রের কোন এক কোম্পানীর নির্দিষ্ট পজিশনে দক্ষ লোক দরকার। এক্ষেত্রে
o – এই পজিশনটি H1B-এর জন্য তালিকাভুক্ত কর্মক্ষেত্রের মধ্যে হতে হবে।
o – চাকুরীর বেতন যুক্তরাষ্ট্রের “স্টেট এমপ্লয়মেন্ট সিকিউরিটি এজেন্সী”-র নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতনের সমান বা বেশি হতে হবে।
o – কোম্পানীটিকে এই বেতনে কর্মচারী রাখার মতো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন হতে হবে।
o – বিগত তিন মাসে এই কোম্পানী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিককে বরখাস্ত করার রেকর্ড থাকা যাবে না। (http://www.lawfirms.com/resources/immigration-law/us-visa/2011-h1b-application-issues.htm)
এখন এই কোম্পানী যদি যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসকারীদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক খুঁজে না পায়, তখন অন্যান্য দেশের প্রার্থীদের মধ্য থেকে কোন এক প্রার্থীকে তারা বাছাই করতে পারে। এজন্য প্রার্থীকে যেসব ডকুমেন্ট দিতে হবেঃ
o – শিক্ষাগত যোগ্যতার যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
o – পাসপোর্টের সব পাতার ফটোকপি
o – প্রফেশনাল বায়োডাটা
o – বিভিন্ন কোম্পানীতে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
শিক্ষাসনদ মূল্যায়নের (Evaluation) জন্য Josef Silny ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। এসবের কোন একটায় সার্টিফিকেট ও মার্কশীটের মূল কপি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ পাওয়া সম্ভব।
প্রার্থী বাছাইয়ের পর কোম্পানীটি প্রথম DOL (Department of Labor)-এ LCA (Labor Certification Application)-এর জন্য আবেদন করবে। এখানে তাকে প্রমান করতে হবে যে সে এই পজিশনে সরকার নির্ধারিত বেতনে চাকুরী দিতে সক্ষম এবং এজন্য নাগরিকদের মধ্য থেকে সমান যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। এবং H1B প্রার্থীকে এখানের নাগরিকের সমান সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে। LCA-র সার্টিফিকেট হাতে এলে তখন কোম্পানী তার অফিসের নোটিসবোর্ডে ন্যূনতম ১০ দিনের জন্য চাকুরীর বেতনসহ বিস্তারিত উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিবে। এবিষয়ে অফিসের কারও কোন অভিযোগ না থাকলে এবং স্থানীয় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে তখন কোম্পানীটি USCIS (U.S. Citizenship and Immigration Services)-এ বিদেশী প্রার্থীর H1B ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিবে। আবেদনের সাথে কোম্পানীর বিভিন্ন ডকুমেন্টের পাশাপাশি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার সনদ, বায়োডাটা ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
ওয়ার্ক পারমিটের আবেদনের ফি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে প্রদান করতে হবে, প্রার্থীকে না। কোম্পানী সাধারণ বা প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর জন্য আবেদন জমা দিতে পারে। প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর ক্ষেত্রে সাধারণ আবেদনের ফি থেকেও আরও ১০০০ ডলারের মতো বেশি ফি দিতে হবে। যদি প্রিমিয়াম প্রসেসিং-এর আবেদন করে থাকে, তাহলে আবেদনের ফলাফল দুই সপ্তাহের মধ্যেই কোম্পানী পেয়ে যাবে। নইলে এক্ষেত্রে কয়েক মাসের মতো সময় লাগবে।
সব কিছু ঠিক থাকলে USCIS প্রার্থীকে শুধুমাত্র ঐ কোম্পানীতে চাকুরী করার শর্তে ৩ বছরের জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রদান করবে। ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপি চাকুরীদাতা কোম্পানীকে পাঠানো হবে। তখন তারা প্রার্থীর কাছে কোম্পানীর পক্ষ থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি পাঠাবে, সাথে ওয়ার্ক পারমিটের মূল কপির নিচের অংশটুকু (প্রার্থীর অংশ) পাঠানো হবে।

H1B ভিসা
কোম্পানী থেকে চাকুরী প্রদানের চিঠি ও ওয়ার্ক পারমিটের কপি হাতে এলে প্রার্থী যে দেশে থাকে সেখানকার আমেরিকান এম্বেসীতে H1B ভিসার জন্য আবেদন করবে। অনেকে H1B ওয়ার্ক পারমিট ও H1B ভিসা এই দু’টোকে গুলিয়ে ফেলেন। H1B ওয়ার্ক পারমিট হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে সেদেশে চাকুরী করার অনুমোদন, আর H1B ভিসা হলো সেই অনুমোদনের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমোদন। কেউ যদি ইতিমধ্যেই অন্য কোন ভিসায় (যেমন ছাত্র হিসাবে) যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর সেখানে বসবাসরত অবস্থায় H1B ওয়ার্ক পারমিট পায়, সেক্ষেত্রে তাকে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর নতুন করে আবার ভিসা নিতে হবে না। ভিসার আবেদনের সাথে যেসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবেঃ
o – কোম্পানী থেকে পাঠানো চাকুরী প্রদানের চিঠি
o – h1B ওয়ার্ক পারমিটের মূল অংশ (প্রার্থীর অংশ) ও পুরো পারমিটের ফটোকপি
o – পাসপোর্ট
o – শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (মূল কপি), যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের সনদ
o – বায়োডাটা
o – অভিজ্ঞতার সনদ ইত্যাদি।
ভিসার ইন্টারভিউ অফিসার যেধরণের প্রশ্ন করতে পারেঃ
o – আপনার কোম্পানী কি টাইপের কাজ করে?
o – চাকুরীতে আপনার দায়িত্ব কি কি হবে?
o – বেতন কতো হবে? বেতনের পাশাপাশি আর কি কি সুবিধা দিবে কোম্পানী?
o – কোম্পানীতে মোট কতোজন কাজ করে?
o – কোম্পানীর বার্ষিক আয় কতো?
o – আপনার বিশেষ দক্ষতা কোন কোন ক্ষেত্রে?
o – বর্তমান কোম্পানীতে কতোদিন যাবত আছেন?
o – এখানে আপনার দায়িত্ব কি কি?
o – কোথায় পড়ালেখা করেছেন? সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?
o – যুক্তরাষ্ট্রে কতোদিন থাকার প্ল্যান?
সাধারণত ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা হবার কথা না। তবে ভিসা অফিসার যেসব বিষয় দেখবে তা হলোঃ
o – ওয়ার্ক পারমিট আসল কিনা
o – কোম্পানী জেনুইন কিনা
o – প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সঠিক কিনা
o – প্রার্থীর স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা। (যেকোন নন-ইমিগ্রেশন ভিসায় শুরুতেই ধরে নেয়া হয় যে প্রার্থী একজন সম্ভাব্য অভিবাসনকারী। এটা প্রার্থীর দায়িত্ব প্রমান করা যে তার যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থেকে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই)।
সব ঠিক থাকলে ইন্টারভিউ শেষে ভিসা অফিসার পাসপোর্টে ১ বছরের জন্য H1B ভিসার অনুমোদন দিয়ে দিবে। ব্যস, ঝামেলা শেষ! এখন বিমানের টিকেট কাটা ও লম্বা যাত্রার অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে থাকুন।
পরিবারের জন্য H4 ভিসা
H1B প্রার্থী তার স্বামী/স্ত্রী এবং অনুর্ধ ১৮ বছরের সন্তানদের সাথে নিয়ে যেতে পারবে। এজন্য তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট হওয়া পর্যন্ত আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না। তবে ওয়ার্ক পারমিট হয়ে গেলে H1B ভিসার আবেদনের সময় তাদের প্রত্যেকের জন্যে H4 ভিসার আবেদন জমা দিতে হবে। সবার ইন্টারভিউ একসাথেই হবে। যদি প্রার্থীর H1B ভিসার সব ডকুমেন্ট ঠিক থাকে, তাহলে পরিবারের অন্যান্যদের ভিসার জন্য শুধুমাত্র পারিবারিক সম্পর্ক প্রমান করলেই চলবে। তাদের ভিসার জন্য অন্য কোন যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে না। স্বামী/স্ত্রীর ক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামা ও রেজিস্ট্রেশনের সার্টিফিকেটের ইংরেজী কপি ও বিয়ের অনুষ্ঠানের যতো বেশি সম্ভব ছবি সাথে নিতে হবে। আর সন্তানদের ক্ষেত্রে তাদের আইডি, জন্ম নিবন্ধন, পরিবারের অন্যান্যদের সবার সাথে ছবি ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর H1B ভিসার অনুমোদন হয়ে গেলে অন্যান্যদের H4 ভিসার অনুমোদনও দিয়ে দেয়ার কথা সহজেই। H4-এর মেয়াদ প্রার্থীর ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদের সমান হবে, তবে ভিসা দেয়া হবে শুধুমাত্র ১ বছরের জন্য।
H4-এর উপর বিস্তারিত আরও জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কটি দেখতে পারেনঃ
http://www.path2usa.com/h4-dependent-visa

H1B-এর মেয়াদ
H1B ওয়ার্ক পারমিট প্রতিবার ৩ বছরের জন্য দেয়া হয়। প্রথমবারের ৩ বছর পার হয়ে যাবার আগে আগে চাকুরীদাতা কোম্পানী H1B ওয়ার্ক পারমিট রিনিউ করার আবেদন করবে। রিনিউ করার ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো তেমন একটা ঝামেলা নেই। যদিও চাকুরীদাতা কোম্পানীকে আগের মতোই তার এবং প্রার্থীর সব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। তবে এবার আর বাৎসরিক আবেদিনকারীর কোটার ভিতরে তাদের হিসাব করা হবে না। মূলতঃ দেখা হবে প্রার্থীর বেতন ঠিক আছে কিনা, এবং কোম্পানী ঠিক আছে কিনা। প্রতিবার রিনিউ করলে আবারও ৩ বছরের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে। এভাবে কোন এক প্রার্থী একটানা সর্বোচ্চ ৬ বছর H1B ওয়ার্ক পারমিটের উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে। ৬ বছরের মধ্যে যদি গ্রীন কার্ড না হয়, তবে ঐ প্রার্থীকে নতুন করে আর ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে না, এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। নতুন করে আবারও H1B-এর জন্য আবেদন করার আগে ঐ প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ন্যূনতম ১ বছর পার করতে হবে।
মজার ব্যপার হলো ওয়ার্ক পারমিট ৩ বছরের জন্য দেয়া হলেও তার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশীদের H1B ভিসা দেয়া হয় মাত্র ১ বছরের। ভিসার প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য। একবার প্রবেশ করলে এর পর ওয়ার্ক পারমিটই যথেষ্ট এখানের বৈধতা বজায় রাখার জন্য। ভিসার মেয়াদ থাকা অবস্থায় একজন যতো খুশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে। মেয়াদ পার হয়ে গেলেও ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে কোন সমস্যা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একবার অন্য কোন দেশে গেলে ফিরে আসার সময় আবারও H1B ভিসার আবেদন করতে হবে। সব কিছু বৈধ থাকলে সাধারণত নতুন ভিসা দিতে আর সমস্যা করার কথা না এম্বেসীর।
চাকুরী পরিবর্তন
প্রার্থীকে H1B ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় শুধু মাত্র আবেদনকারী নির্দিষ্ট কোম্পানীর নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রে চাকুরী করার জন্য। কর্মক্ষেত্র বা কোম্পানীর পরিবর্তনের সাথে সাথেই ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানও অবৈধ হয়ে যায়। চাকুরী পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হচ্ছে নতুন কোম্পানীকেও প্রার্থীর জন্য H1B ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করতে হবে, এবং পুরানো কোম্পানীর চাকুরী ছাড়ার আগেই নতুন কোম্পানীর ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছাতে হবে। অর্থাৎ নতুন কোম্পানী USCIS থেকে আবেদন প্রাপ্তির রশিদ হাতে পেলেই তখন থেকে প্রার্থী নতুন কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করতে পারছে। এরপর মূল ওয়ার্ক পারমিট হাতে আসতে কয়েক মাস লাগলেও কোন সমস্যা নেই।
এছাড়া চাকুরীদাতা কোম্পানী যদি যেকোন সময় প্রার্থীকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে, তখনও প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা হারাবে। এক্ষেত্রে প্রার্থী ও তার পরিবারের সবাইকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর খরচ কোম্পানী বহন করতে বাধ্য, যা কিনা অনেক প্রার্থীই জানে না।
গ্রীন কার্ড
H1B প্রার্থীকে তার গ্রীনকার্ডও চাকুরীদাতা কোম্পানীর মাধ্যমেই প্রসেস করতে হবে। প্রতিবার H1B ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ থাকে ৩ বছর করে। কোন কোম্পানী যদি প্রার্থীকে এর চেয়ে লম্বা সময়ের জন্য স্থায়ীভাবে চাকুরীতে রাখতে চায়, তখন সে USCIS-এর কাছে প্রার্থীর স্থায়ী ওয়ার্ক পারমিটের (Permanent Labor Certificate) জন্য আবেদন করবে। USCIS যদি এর অনুমোদন দেয়, তখন তার উপর ভিত্তি করে গ্রীন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।

H1B-এর সীমাবদ্ধতা ও কিছু বাস্তবচিত্র
H1B প্রার্থীর মূল সীমাবদ্ধতা হলো
o – চাইলেই সে কোম্পানীর চাকুরী ছাড়তে পারছে না। (চাকুরী ছাড়ার আগেই অন্য কোন কোম্পানী থেকে H1B ম্যানেজ করতে হবে)।
o – ভবিষ্যতের গ্রীনকার্ডের জন্যেও তাকে চাকুরীদাতার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে।
আর যেসব কোম্পানী চাকুরী দেয়, তারাও এই সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে ভালমতোই জানে। এর সুবিধা নিতেও তারা ছাড়ে না। বিশেষ করে ভারতীয়, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোর অনেকেই কাগজে-কলমে এখানের হিসাবে বেতন দেখালেও তার চেয়ে অনেক কম বেতনে কাজ করানোর জন্য H1B-তে লোক নিয়ে আসে। তারপর না সেই বেতন আর ঠিকমতো বাড়ে, না সেই প্রার্থী হুট করে চাকুরীর পরিবর্তন করতে পারে। তার উপর কোম্পানীর ভাব হচ্ছে “আমাদের দয়াতেই তো যুক্তরাষ্ট্রে আসার মতো সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছ”। তারা যে এখানের আইন ভঙ্গ করে কর্মচারীকে তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করছে, সেসম্পর্কে তাদের কোন অপরাধবোধই নেই। বরং নাকের সামনে গ্রীন কার্ডের মুলো ঝুলিয়ে দেই-দিচ্ছি করতে করতেই বছরের পর বছর পার করে দেয় কোম্পানীগুলো। প্রার্থীরও তখন একটাই টার্গেট থাকে, কষ্টে-সৃষ্টে কোনমতে যদি একবার গ্রীনকার্ডটা হয়ে যায়! সেই গ্রীনকার্ডের জন্যেও শেষে প্রার্থীকেই খরচপাতি করতে হয়, পাশাপাশি কোম্পানীর হাত-পা ধরে তাদের ১০১-টা মামাবাড়ীর আব্দার মাথা নত করে মেনে দিন পার করতে হয়।
আবার ভারতীয় কিছু কোম্পানী আছে, তাদের কাছে H1B-তে লোক আনাটাই একটা ব্যবসা। তারা হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে H1B এর নাম করে নানারকম ফি নেয়। তারপরে আদৌ যে কয়জনের H1B চূড়ান্ত হয়, তাদের থেকেও মোটা অংকের সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। তাদের অনেকেই আবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর দেখে যে তাদের স্থায়ী কোন চাকুরী নেই। অন্য কোথাও কন্ট্রাক্টে কাজ পেলে তাদের কোম্পানী তাদের সেখানে পাঠায়, আর তেমন কোন কাজ হাতে না থাকলে কয়েক সপ্তাহেই তাদের চাকুরী নট হয়ে যায়। স্বপ্নের ভেলায় ভেসে ভেসে তারা এসে অথৈ সাগরে পড়ে।
ইদানীং বাংলাদেশেও তেমনটাই শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই এধরণের কোন কোম্পানীর খপ্পড়ে পরে গাঁটের পয়সা খরচ করার আগে সবাইকে ভালমতো সেই কোম্পানী, যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোম্পানী H1B-এর জন্য আবেদন করবে, তাদের মোট কতোজন লোক দরকার, কি হিসাবে লোক পাঠাচ্ছে, চাকুরীর ধরণ কি স্থায়ী নাকি কন্ট্রাক্ট ভিত্তিক, কোন হিসাবে তারা বিভিন্ন ফি দাবী করছে, কে এই ফি পাবে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন প্রশ্ন করে। যে কোম্পানী লোক নিবে, সে না হয়ে অন্য কোন দালাল কোম্পানী হলে তাদের সাথে কোন কন্ট্রাক্টে যাবেন না দয়া করে। মনে রাখবেন, আপনার দরকার বলে তারা আপনাকে চাকুরী দিচ্ছে না। বরং তাদের আপনার মতো কাউকে দরকার বলেই চাকুরীর অফার দিচ্ছে।
পরিশেষে
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রযুক্তিবিদেরা বেশ ভাল একটা অবস্থান করে নিয়েছে H1B-এর মাধ্যমে এখানে এসে। আমাদের দেশেরও অনেকেই এখানে আছে আমার মতো। আরও অনেকেই আসছে, যদিও অর্থনৈতিক মন্দার সরাসরি প্রভাবে H1B-তে চাকুরী দেয়ার মতো কোম্পানীর সংখ্যাও আগের থেকে অনেক অনেক কমে গেছে । আমরা চাই তারপরেও আরও অনেকে আসুক এখানে, এবং নিজের ভাল একটা অবস্থান তৈরী করে নিয়ে এখান থেকে দেশের জন্যেও প্রযুক্তি খাতে কিছু করুক। তবে সেজন্য দালালের খপ্পড়ে না পড়ে নিজের থেকে ভালমতো খোঁজখবর নিয়ে সরাসরী চাকুরীদাতা কোম্পানীর সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করবো। নিচে কিছু ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিলাম যেখানে বর্তমান বাজারের H1B ভিত্তিক চাকুরীর তথ্য পাওয়া যাবে ও আবেদন করা যাবে।
• – http://www.myvisajobs.com/H1B_Visa.aspx – এই ওয়েবসাইটে চাকুরীর তথ্যের পাশাপাশি কোন কোন কোম্পানী কোন বছর কতোজন লোক H1B-তে নিয়েছে এবং গড়ে বেতন কতো তার পরিসংখ্যানও পাওয়া যাবে। সাইটটিতে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন করে এই সার্ভিস পাবেন।
• – http://www.h1bvisa.info/h1b_jobs
• – http://www.h1visajobs.com/
এছাড়াও নিচের ওয়েবসাইটগুলোতে সার্চ কী-ওয়ার্ডে চাকুরীর পজিশনের পাশাপাশি “H1B”, “H-1B”, “H1-B” ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে এধরণের আরও চাকুরী খুঁজে পাবেন।
• – http://www.careerbuilder.com/
• – http://www.monster.com/
• – http://www.dice.com/

UK- ভিসা নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই ইউকে যাওয়ার জন্য অসংখ্য আবেদন পত্র জমা পড়ে। অনেকে ভিসা প্রাপ্তিতে সফল হন, অনেকে হন না। তো কিছু কৌশল দেখে নিন। এগুলো অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়া যায়, অন্যথায় ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়। মূলত তিনটি আইন দ্বারা ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
1) UK Immigration Act
2) UK Migration & Refugee Protection Act
3) UK Data Protection Act
ইউকে ভিসা কানুন সমূহঃ
যে ঘোষণা অনুসমর্থন করে ইউকে ভিসার জন্য আবেদন পত্র দাখিল করতে হয়-
১/ যে ছবিখানা সংযুক্ত করা আছে, তা প্রকৃত অর্থে প্রার্থীর।
২/ আবেদন করা কালীন যে কোন কার্যকর তথ্য পরিবর্তন ঘটলে তা ইউকে কূটনৈতিক মিশনকে অবহিত করতে হবে।
৩/ ইউকে অভিবাসন আইন, ১৯৭১ অনুসারে- ভিসা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য দেওয়া কিংবা সত্য গোপন করা গুরু অপরাধ।
৪/ যে কোন কাগজপত্র মিথ্যা প্রমাণিত হলে ইউকে গমন ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে, কিংবা ভিসা প্রার্থীর নাম কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে।
৫/ ইউকে অভিবাসন আইন ভঙ্গ করলে একই মাত্রার শাস্তি হতে পারে।
৬/ আবেদনপত্রের সাথে জমাকৃত কাগজপত্রের সততা নিরূপণে ইউকে কূটনৈতিক মিশন যে কোন যাচাই বাছাই এর ক্ষমতা রাখে।
৭/ ভিসা প্রসেস বাবদ প্রদত্ত অর্থ (১০,০০০ টাকা) আগেই কেটে নেওয়া হয়, কখনই তা ভিসা পাবার নিশ্চয়ক নয়।
৮/ আবেদনপত্রে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, প্রার্থীর ইউকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ রয়েছে। এবং তিনি ভ্রমণ শেষে যথাসময়ে নিজ দেশে ফিরে যাবেন।
৯/ ভিসা পাওয়ার আরেকটি পূর্বশর্ত হল, গমনকারী ইউকে অবস্থানকালে কোন অবস্থায় পাবলিক ফান্ড থেকে আর্থিক সাহায্য নিবে না, তা প্রমাণ করা।
১০/ ইউকে তথ্য সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৮ অনুসারে আবেদনকারীর সমস্ত প্রদত্ত তথ্য ইউকে বর্ডার এজেন্সী সংরক্ষণ করে রাখে। কোন কোন ক্ষেত্রে আইন অনুসারে সে তথ্যাবলী অন্য দেশের কূটনৈতিক মিশনেও তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রদান করা হয়। সুতরাং, বুদ্ধিমত্তা হল, আবেদনপত্রে যে তথ্য দেওয়া হয়, পুরোটুকু নিজের কাছেও রেখে দেওয়া। নচেৎ, তথ্যের গরমিল হলে ভিসা প্রাপ্তি অনিশ্চিত। উল্লেখ্য, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কম্পিউটারেও রাখা যায়, আবার ফরম ফটোকপি করেও রাখা যায়।

সাধারণত ভিসা প্রাপ্তি/ অপ্রাপ্তির সাথে টাকা ফেরত পাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ৩ মাস ৭ দিনের মধ্যে লিখিত স্থগিত- অনুরোধ করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে, স্থগিত অনুরোধ অবশ্যই বায়োমেট্রিক তথ্য (Biometric Data) প্রদানের পূর্বে এবং ভিসা প্রসেসিং শুরু হওয়ার আগে হতে হবে।
উল্লেখ্য, আবেদনকারীর সকল কাগজপত্র যে কোন স্থানে পরিহবহন বা হস্তান্তরের যাবতীয় ঝুঁকি বা দায়িত্ব ইউকে বর্ডার এজেন্সি বহন করে।